বাচ্চাদের খাবার তালিকা বিস্তারিত জানুন

আজকে বাচ্চাদের খাবার তালিকা বিস্তারিত জানুন ।  ছয় মাস পর্যন্ত বাচ্চাদের মায়ের দুধের বিকল্প আর কোন কিছুই হয় না। ছোট বাচ্চাদের কি খাওয়াবো । এটা সবার মাথায় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় । আজকে এই পোষ্টের মধ্যে আমরা শিশুকে খাওয়ার সময় যে বিষয়গুলো আমাদের মনে রাখতে হবে সে বিষয় নিয়ে আলোচনা করব ।  জানতে পুরো পোষ্টটি পড়ার অনুরোধ রইলো।
বাচ্চাদের খাবার তালিকা বিস্তারিত জানুন
আজকে চলুন ছোট বাচ্চাদের খাবার তালিকা বিস্তারিত জানা যাক । বাচ্চার বয়স ৬ মাস পার হওয়ার সাথে সাথে সম্পর্ক কিছু খাবার দিতে হয়। বয়স ভেদে শিশুদের খাবার তালিকা বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে সেগুলোই আজকে, আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব।

ভুমিকা

বাচ্চাদের ছয় মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধের বিকল্প কোন কিছু দরকার হয় না । ছয় মাস পার হওয়ার পর থেকেই বাচ্চা আস্তে আস্ত বড় হতে থাকে , তখন তার বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হয় । তাহলে আজকে চলুন বাচ্চাদের খাবার তালিকার সমন্ধে বিস্তারিত জানি।

বাচ্চাদের খাবার তালিকা বিস্তারিত জানুন 

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে ,প্রক্রিয়াজাত খাবার শিশুদের বিকাশজনিত সমস্যাও ডেকে আনতে পারে। PLOS ONE জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে ,যে শিশুরা প্রক্রিয়াজাত খাবার খেয়েছে তাদের ADHD এবং আচরণ এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণে অন্যান্য সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।তবে এটি কেবল প্রক্রিয়াজাত খাবারের জন্য দায়ী নয়। 

পেডিয়াট্রিক্স জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে উচ্চ চর্বি এবং চিনিযুক্ত খাবার মস্তিষ্কে পরিবর্তন আনতে পারে যা মনোযোগ এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা সৃষ্টি করে।বেশিরভাগ মা-বাবা রায় মনে করে যে আমরা আমাদের বাচ্চাদের কী খাওয়াচ্ছি সে সম্পর্কে আমাদের আরও সচেতন হওয়া দরকার। 


শুধুমাত্র একটি খাবারকে "স্বাস্থ্যকর" বা "বান্ধব-বান্ধব" হিসেবে বাজারজাত করার অর্থ এই নয় যে এটি আসলে তাদের জন্য ভালো।আপনার শিশু তাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য এখানে কিছু টিপস রয়েছে:
  • খাবার যাতে সুষম হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। তাদের মধ্যে চর্বিহীন প্রোটিন, ফল এবং শাকসবজি এবং পুরো শস্য অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
  • চিনি, লবণ এবং অস্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
  • স্ক্রিন টাইম সীমিত করুন এবং নিশ্চিত করুন যে খাবার টেবিলে খাওয়া হয়। এটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসকে উত্সাহিত করতে এবং অতিরিক্ত খাওয়াকে নিরুৎসাহিত করতে সহায়তা করবে।
  • আপনার শিশুকে ধীরে ধীরে এবং মন দিয়ে খেতে উত্সাহিত করুন। এটি তাদের ক্ষুধার সংকেতগুলিতে মনোযোগ দিতে এবং কখন তারা পূর্ণ হয় সে সম্পর্কে আরও সচেতন হতে সহায়তা করবে।
এই টিপসগুলি অনুসরণ করলে তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে যে আপনার শিশু সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাচ্ছে।

৬মাসের শিশুর খাবার তালিকা 

ফ্রিজে রাখা কোন খাবার খাওয়াবেন না নতুন করে প্রতিবার রান্না করে খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন ।শুরুতে তো খাবার দিয়ে শুরু করবেন না প্রথম অবস্থায় হালকা নরম খাবার দিয়ে শুরু করবেন ।এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগে গরুর দুধ খাওয়ানো যাবেনা ।শিশুকে জোর করে একসঙ্গে অনেকটা খাবার ঠিক না ।৬মাসের শিশুর খাবার তালিকা নিচে বর্ণনা করা হলো:
  • মাছ -মাংস:এ সময়ে মাছ -মাংস দিয়ে তৈরি খাবার খাওয়াতে পারেন ,মাছ-মাংস প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করবে ।
  • পাকা পেঁপে :পাকা পেঁপে শিশুকে খাওয়ানো যেতে পারে। পাকা পেঁপে রস বা কাঁচা পেঁপে সেদ্ধ করে খাওয়াইতে পারেন ।বেদানা ,কলা ,আঙ্গুর অল্প অল্প করে এগুলো শিশুকে দিতে পারেন ।
  • চালের সুজি :সামান্য দুধের সাথে চালের সুজি দিয়ে রান্না করে আপনার বাচ্চাকে খাওয়াতে পারেন । চালের সুজি অনেকটা ভাতের কাজ করবে , আপনার শিশুকে শক্তি জোগাতে সাহায্য করবে।
  • আলু ,বাদাম :শিশুকে বাদাম মেশানো খাবার খাওয়াইতে পারেন । আলু সেদ্ধ করে নিয়ে আপনার বাচ্চাকে খাওয়াতে পারেন এটা শরীরের জন্য খুব ভালো কাজ করবে ,শক্তি যোগাতে সাহায্য করবে । ৬ মাস বয়স থেকে শিশুকে বাড়তি খাবার দিন ,শক্তি যোগাতে , দেহের ক্ষয় পূরণ, মেধাবিকাশ এবং রেগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে ।
  • ডিম :নিয়মিত আপনার শিশুকে একটি করে ডিম খাওয়াতে পারেন । এতে শিশুর প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হবে ।

৮ মাসের শিশুর খাবার তালিকা

শিশুকাল মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর সাথে সাথে, সদ্য প্রস্তুতকৃত খাবার এবং ভালো করে রান্না করা নরম খাবার দিন , শিশু যেনো তাড়াতাড়ি সেটা হজম করতে পারে । এখন থেকে আমরা শিশুকে আমিষ জাতীয় খাবার দিতে পারি এটা যেন অবশ্যই ভালো করে রান্না এবং সিদ্ধ করা হয়।


শিশুকে খাওয়ানোর সময় মোবাইল বা টিভি দেখে খাওয়ানো যাবে না । এতে শিশুর অভ্যস্ত হয়ে যেতে পারে, দেখা যাচ্ছে মোবাইল বা টিভি দেখা ছাড়া সে খেতে যাচ্ছে না ।আপনার শিশুকে প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন চিপস, জুস, বিস্কুট এগুলা একদম দিবেন না ।৮ মাসের শিশুর খাবার তালিকা :
  • ফল:কলা, আপেল , আঙ্গুর, লেবু, বেদানা, কমলা ইত্যাদি ফল দিতে পারেন শিশুকে ।ছোট পিচ করে কেটে দিতে পারেন আপনার শিশুকে ,যেনো হাতে ধরে খেতে পারে ।
  • ডাল: ছোলা, চিড়া , আটা , দালিয়া
  • আমিষ:মাছ, মাংস, ডিম
  • মসলা:পেঁয়াজ, আদা ,মেথি,সরষে, রসুন ,কারিপাতা।
  • শাকসবজি :ফুলকপি ,ব্রকলি ,পালং শাক ,গাজর ,মিষ্টি কুমড়া, লাউ ,টমেটো

১২ মাসের শিশুর খাবার তালিকা

বারো মাসে সাধারণত শিশুরে দাঁত উঠার বয়স ।এ বয়সে সাধারণত শিশুরা চাবিয়ে খেতে আগ্রহী হয়, আমাদের উচিত শিশুরা যেন একটু চাবিয়ে খেতে পারে এমন ধরনের খাদ্য তালিকা তৈরি করা। আমরা চেষ্টা করব পারিবারিক খাবার গুলো দেওয়ার জন্য যেন বাচ্চার জন্য আলাদাভাবে কোন খাবার তৈরি করা প্রয়োজন না হয়। এতে আমাদের সময় কষ্ট দুইটাই কমে যাবে ।


চলুন তাহলে ১২ মাসের শিশুর খাবার তালিকা সম্বন্ধে জেনে নেওয়া যাক:
  • খাদ্যশস্য : চাল ,গম, ভুট্টা,জব ,ওটসএই সকল খাদ্যশস্যদের নরম করে যাও ভাত তৈরি করা যেতে পারে যা বাচ্চাদের শর্করা চাহিদা পূরণ করবে
  • ফল :মৌসুমী ফল ,আম ,কলা, নাশপাতি ,পাকা পেঁপে ,পাকা কলা স্ট্রবেরি লেবু।
  • ডাল :সুগন্ধি মুগ ডাল, মসুরের ডাল,সোলার ডাল সেদ্ধ করে বাচ্চাকে খাওয়ানো যেতে পারে ।
  • সবজির সুপ: সবুজ, লাল, কমলা, হলুদ বিভিন্ন রঙের সবজির সাথে আলুও ভুট্টা মিশিয়ে তৈরি করতে পারি সবজির সুপ
  • চিকেন বা মুরগির মাংস :মুরগির মাংস ছোট ছোট টুকরা করে ভেজে অথবা সবজির সাথে দেওয়া যেতে পারে যেমন ফুলকপি ,গাজর ,আলু
  • মাছ :মাছ প্রোটিনের একটা বড় উৎস এছাড়াও মাছগুলোতে পাওয়া যায় ওমেগা -3 ,ফ্যাটি অ্যাসিড এবং মাছ থাকে A, D, E, K দ্রবণীয় ভিটামিন।

২ বছরের শিশুর খাবার তালিকা

২ বছরের শিশুর খাবার তালিকা যেসব খাবার থাকবে জেনে নিন: শিম, গাজর, ব্রকলি,মিষ্টি আলু ,পালং, টমেটো ইত্যাদি থেকে ফসফরাস ,ম্যাগনেসিয়াম ,পটাশিয়াম, ফলিক এসিড ,এন্টিঅক্সিডেন্ট এর পরিপূর বাচ্চাদের সব চাহিদা পূরণে এই সবজিগুলো উত্তম ভাবে পূরণের সক্ষম ।ভেজিটেবল রোল ,ভাত, ডাল, মাছ, মিল্কশেক, ওটস, মৌসুমী কোন ফল, সবজি খিচুড়ি, ডিম ভুজিয়া ,হাত রুটি,মুরগি মাংস, দই ,হালুয়া ইত্যাদি বাচ্চাদের খাবার তালিকা রাখতে পারেন।
শিশুকে খাওয়ার সময় যে বিষয়গুলো আমাদের মনে রাখতে হবে
ফাস্টফুড জিনিসগুলো দূরে রাখুন , টাটকা খাবার বেশি দিন। দুপুরের খাবারের আগে রাত্রের খাবারের আগে ফাস্টফুড জাতীয় কোন খাবার দেবেন না ।বাবুকে যে খাবারগুলো দিচ্ছেন সেগুলোতে বাবুর এলার্জি হচ্ছে কিনা সেদিকে পর্যবেক্ষণ করুন ।জোর করবেন না, ধৈর্য ধরে খাওয়াবেন । খাবার সময় টিভি বা মোবাইলের ভিডিও চালিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করবেন না ।

লেখক এর মতামত

এক এক বয়সের শিশু দের এক এক রকম খাওয়া-দাওয়া দিতে হয় ।বয়স ভেদে বাচ্চাদের খাবার তালিকা বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করেছি । যদি আপনাদের কিছু উপকারে এসে থাকি তাহলে , আমার এই পোস্ট টি আপনার প্রিয়জন বা বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

টুকিটাকিরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url