ব্ল্যাক রাইস চাষ পদ্ধতি জেনে নেই

চলুন তাহলে আজকে কালো চালের উপকারিতা এবং ব্ল্যাক রাইস চাষ পদ্ধতি জেনে নেই ।চাল আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী । আজকে আমার এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদের কে কালো চাল সম্বন্ধে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করেছি।  পুরোপুরি জানতে আমাদের সাথে থাকোর অনুরোধ রইলো ।
ব্ল্যাক রাইস চাষ পদ্ধতি জেনে নেই
বহুমুখী পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ব্ল্যাক রাইচ । কালো চালের উপকারিতা আজকে মেডিকেল সাইন্স দ্বারা প্রমাণিত। আজকে আমরা কালো চালের আদ্যপ্রান্ত সম্পর্কে জানাতে চলেছি আর্টিকেলটি পড়লে আপনি অবশ্যই উপকৃত হবেন।

ভূমিকা

কালো চালকে “ওয়ার্ল্ড সুপার ফুড” বলা হয় শুধুমাত্র এর চিকিৎসা বিষয়ক গুণাবলীর জন্য। এতে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট ও অন্যান্য উপাদান আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াই ,হার্ট ,ব্রেন ,লিভার, চোখের সুরক্ষা দেয়, এমনকি কালো চাল ক্যান্সার প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে। কালো চালের ইতিহাস, কোথায় পাওয়া যায় ,এর চাষ পদ্ধতি,সর্বোপরি কালো চালের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পুরো পোস্টটি পড়ুন।

ব্ল্যাক রাইস চাষ পদ্ধতি জেনে নেই

চলুন তাহলে ব্ল্যাক রাইস চাষ পদ্ধতি জেনে নেই।ব্ল্যাক রাইস চাষের পদ্ধতি আমাদের দেশীয় ধান এর মতই। প্রথমে ধানের জমি তৈরি করতে হয় ধানের জমি তৈরির জন্য ভালো ভাবে চাষ করে নিতে হয় এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে কাদা তৈরি করে নিতে হবে। নাইট্রোজেন ফসফরাস পটাশিয়াম যুক্তসার ব্যবহার করতে হবে হাতে দিতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব সার প্রয়োজন মত কীটনাশক দানাদার।


চারার ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যারা যেন আড়াই থেকে তিন ফিট পর্যন্ত বড় হয় ।চারার বয়স হয় ২৫ দিন থেকে এক মাস পর্যন্ত চার থেকে পাঁচটি করে কুশি নিতে হবে এবং এক শারি থেকে অন্য শারির দূরত্ব হবে এক ফিট পাশাপাশি দূরত্ব হবে ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি। 

১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে ইউরিয়া সার কীটনাশক দিতে হবে।পুনরায় সার প্রয়োগ করতে হবে এবং ছত্রাক নাশক দিতে হবে ৪০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে। কালো ধানের চাষ আমন মৌসুমেই ভাল হয়। ১১০ থেকে ১২০ দিনের মধ্যেই এই ধান কাটার সময় হয়ে যায়।

কালো চালের উপকারিতা

  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য:কালো চালে অন্য যেকোনো চালের চেয়ে বেশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।কালো চাল অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ, যা বার্ধক্যের নেতিবাচক প্রভাব কমায়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-অ্যান্টোসাইনানিন কার্ডিওভাসকুলার রোগ কমাতে সাহায্য করে। সুস্থ মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয় এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। ওজন হ্রাস সমর্থন করে পুরো খাবার ধীরে ধীরে শোষিত হয়, দীর্ঘ সময়ের জন্য ক্ষুধা প্রতিরোধ করে।
  • স্বাভাবিক কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হাটকে সুস্থ রাখে:কালো চালের প্রতিটি দানার ভিতরে লুকিয়ে থাকে "অ্যানথোসায়ানিন ফাইটোকেমিক্যালস"।এগুলো খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রাকে স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে যা আপনার শরীরের কোলেস্টেরল বিপাক করার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে কার্ডিওভাসকুলার রোগে অবদান রাখতে পারে।
  • সুস্থ মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বজায় রাখে:উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-অ্যান্টোসায়ানিন স্বাস্থ্যকর মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং প্রদাহ হ্রাসে সহায়তা করে বলে মনে করা হয়।        
  • ডায়াবেটিস ও ওজন কমাতে সহায়তা করে:যেহেতু কালো চাল একটি সম্পূর্ণ শস্য, এটি এর তুষে (বাহ্যিক স্তর) উচ্চ মাত্রার ফাইবার সরবরাহ করে।এর মানে হল যে প্রতিটি শস্যের ভিতরে থাকা শর্করা শরীর দ্বারা শোষিত হতে বেশি সময় নেয়, যার ফলে আপনার চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে।যেহেতু উচ্চ মাত্রার ফাইবার আপনাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য পূর্ণ এবং শক্তিমান বোধ করে, তাই আপনি সারা দিন নাস্তা করতে কম প্রলুব্ধ হবেন, তাই আপনাকে স্বাস্থ্যকর খাওয়া, ওজন কমাতে সহায়তা করবে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
  • চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে:কালো চালে শক্তিশালী ক্যারোটিনয়েড রয়েছে যা ক্ষতিকারক নীল আলো থেকে রক্ষা করে এবং বয়সজনিত অন্ধত্বের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা করে।
  • ফাইবারে পরিপূর্ণ:কালো চালে উচ্চ মাত্রার ফাইবার রয়েছে, প্রতি ১০০ গ্রাম কালো চালে প্রায় ৩.৭ গ্রাম ফাইবার রয়েছে, যা আপনাকে একটি খাবারে আপনার দৈনিক ফাইবার গ্রহণের ৭.৪ % গ্রহণ করার একটি সহজ উপায় দেয়।লিভার কে ক্ষতি করতে পারে ধরনের পদার্থ দূর করতে সক্ষম কালো চালের ভাত।দৃঢ় প্রমাণ রয়েছে যে উচ্চ মাত্রার ফাইবারযুক্ত খাদ্য হজমে সাহায্য করতে পারে, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে পারে এবং আমাশা উদারাময় কমাতেও সাহায্য করে। কালো চাল গুলুটিন মুক্ত যার ফলে পেটের সেলিয়াক এলার্জির সম্ভাবনা নেই।
  • প্রোটিনের উচ্চ মাত্রা:আপনি যখন পেশী তৈরি করতে বা ওজন কমাতে চান, তখন আপনাকে প্রায়শই কমাতে বলা হয় প্রথম জিনিসটি হল আপনার কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ।কারণ যে সমস্ত খাবারে কার্বোহাইড্রেট বেশি থাকে সেগুলিতে প্রোটিনের পরিমাণ কম বলে মনে করা হয়, যদিও উভয়ই স্বাস্থ্যকর খাদ্য বজায় রাখার জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ।এখানে ব্যাপারটা তা নয়।কালো চালে প্রাকৃতিকভাবে সমস্ত শস্যের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরের প্রোটিন থাকে, ১০০ গ্রাম কালো চালে ৯.৯ গ্রাম প্রোটিন থাকে, গড় সুপারমার্কেটের নিজস্ব-ব্র্যান্ডের লম্বা শস্যের চালে ৩.৫ গ্রাম প্রোটিনের তুলনায়।

কালো চালের ইতিহাস

ব্ল্যাক রাইস বাংলায় বলে কালো ধান অনেকেই আবার নিষিদ্ধ চাল বা ফারবিডন রাইচ বলে থাকে। এগুলো প্রাচীনকাল থেকে বনে বাদারে পাহাড়ে পাওয়া যেত।পরবর্তীতে এগুলি চাষের আওতায় আসে। কথিত আছে প্রাচীন চীন দেশে মিং যুগের রাজা বাদশা ও তাদের পরিবারের জন্যই ধান চাষ হতো।


রাজ পরিবার ব্যতীত এই চাল খাওয়া নিষেধ ছিল। এই চালের চাষ করা হতো পাহাড়ি এলাকায় অত্যান্ত গোপনীয়তার সাথে। এই কারণে একে নিষিদ্ধ চাল বা ফারবিডন রাইচ বলে।পরবর্তীতে মায়ানমার থেকে বাংলার চট্টগ্রামের আসে এবং পাহাড়িতে জুম পদ্ধতিতে এই কালো ধান বা ব্ল্যাক রাইসের চাষ শুরু হয়।

কালো ধান কোথায় পাওয়া যায়

কালো ধান কোথায় পাওয়া যায় চলুন আজকে বিস্তারিত জানি।পার্বত্য চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ঠাকুরগাঁও,নওগাঁ সহ সারা দেশে প্রায় সাত প্রজাতির কালো চালের ধান পাওয়া যায়। উচ্চ মূল্যের চালের দাম হওয়ায় এর চাষের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশের বর্তমানে সবুজ ও বেগুনি পাতার কালো চাল দুই জাতেরই ধান চাষ হচ্ছে।

এ চাল শুধু দেশে নয়, বিদেশেও জনপ্রিয়। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট বা ব্রির পরিচালক (গবেষণা) এর দিক নির্দেশনায় ব্রিতে প্রথম কালো চাল নিয়ে গবেষণার সূচনা হয়।সারা বিশ্বে প্রায় ২০০ ধরনের কালো চালের জাত বিদ্যমান। শুধু চীনেই প্রায় ৬২% কালো চালের চাষাবাদ হয়।


চীনা বিজ্ঞানীগণ ৫২টি উফশী ও রোগ প্রতিরোধক কালো চালের জাত অবমুক্ত করেছেন চীন ছাড়াও শ্ৰীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, থাইল্যান্ড এবং ফিলিপাইনে কালো ধানের ব্যাপক চাষাবাদ হচ্ছে।বাংলাদেশে উচ্চ ফলনশীল কালো চালের জাত আসে ভিয়েতনাম চীন জাপান ফিলিপাইন ইন্দোনেশিয়া ভারত থেকে । 

বাংলাদেশের সুপার সবগুলোতে সাধারণত হাজার টাকা করে এই চাল পাওয়া যায় এগুলি প্রায় বাইরে থেকে আমদানি কৃত চাল। বর্তমানে আমাদের দেশীয় জাতের কালো চাল পাওয়া যায় মান ভেদে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে।

কালো চালের রেসিপি

কালো চাল কিভাবে রান্না করতে হয় ? কি কি উপায়ে রান্না করে খাওয়া যায় । নিচে কালো চালের রেসিপি দাওয়া হল
  • কালো চালের ভাত: বাঙালির খাবারে ভাত থাকবে না এটা বলাই চলে না, সাদা চালের ভাত রান্নার থেকে কালো চালের ভাত রান্না করার পদ্ধতিটা একটু আলাদা। কালো চাল গুলোকে পানিতে তিন থেকে চার ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে, তবে সারারাত ভিজিয়ে রাখলে ভালো হয়। চালগুলো ফুলে উঠলে পানি ঝরিয়ে নিয়ে ভালোভাবে ৩-৪ বার ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

ভাত রান্নার জন্য পানির পরিমাণটা হবে চালের পরিমাণের দ্বিগুণ। যদি চালটা সারারাত ভেজানো থাকে তাহলে আধা ঘন্টা অল্প আঁচে রান্না করলেই হবে। আর দুই থেকে তিন ঘন্টা ভেজানো থাকে তাহলে অল্প আছে এক ঘন্টা রান্না করতে হবে। এছাড়াও, আমরা আরো বেশ কিছু কালো চালের রেসিপি তৈরি করতে পারি । আপনাদের সুবিধার জন্য আমি কিছু রেসিপি নাম দিয়ে রাখলাম।
  • কালো চালের বিরিয়ানি
  • কালো চালের সবজি পোলাও
  • কালো চালের ফ্রাইড রাইস রেসিপি
  • কালো চালের ক্ষীর পায়েস
  • কালো চালের খিচুড়ি
  • চিংড়ি ও কালো চালের ভুনা
  • মুরগি ও কালো চালের ভুনা

লেখক এর মতামত

আজকের এই আর্টিকেলে আমি জানানোর চেষ্টা করেছি কালো চালের ইতিহাস, কালচার কোথায় পাওয়া যায়, ব্ল্যাক রাইস চাষ পদ্ধতি, কালো চালের উপকারিতা,কালো চালের পুষ্টি উপাদান । আমার তথ্যবহুল এই আলোচনার মাধ্যমে আপনি অবশ্যই উপকৃত হবেন যদি আপনি উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আমাদের এই পোস্টে শেয়ার করুন এবং এরকম আরো তথ্যমূলক ও জ্ঞানগর্ভ আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

টুকিটাকিরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url