বগুড়া জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য

বগুড়া জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য,বগুড়া জেলা কেন এত বিখ্যাত? বগুড়ার জেলায় কি কি আছে?  এ সম্বন্ধে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করেছি আমার এই পোস্টের মাধ্যমে । যদি আপনি বগুড়া জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি  এবং ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্বন্ধে জানতে ইচ্ছুক হন। তাহলে পুরো পোস্টে পড়ার অনুরোধ রইল।
বগুড়া জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য
বাংলার প্রাচীনতম নগরী হল আমাদের এই বগুড়া । তাহলে চলুন আজকে জানা যাক, বগুড়া জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্বন্ধে।

ভূমিকা

প্রায় আড়াই হাজার বছরের গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই বগুড়া শহর। সীমান্ত প্রধান হিসেবে প্রায় ১০০ বছর শাসন করে সেন বংশের নৃপতিরা । সুলতান গিয়াস উদ্দিন এর দ্বিতীয় পত্র সুলতান নাসির উদ্দিন বগার খান বাংলায় দেখভালের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ।এই বগার খানের নাম অনুযায়ী বগুড়ার নামকরণ করা হয় । এই রকম কিছু বগুড়া সম্বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে ,পুরো পোষ্টের সাথে থাকুন।

বগুড়া জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য

বাংলায় প্রাচীনতম নগরী বগুড়া ,ইতিহাস থেকে জানা যায় । পন্ডবর্ধন নামে পরিচিত ছিল মৌর্যযুগে । ১৩শো শতকে মুসলিম শাসকদের অধীনে আসে এই অঞ্চল। সীমান্ত প্রধান হিসেবে প্রায় ১০০ বছর শাসন করে সেন বংশের নৃপতিরা ।গৌড়ের বাহাদুর শাহ ,সেনদের বিতাড়িত করেন অচ্যুত সেনের আচরণে রাগান্বিত হয়ে ।

 ১২৮১ থেকে ১২৯০ খ্রিস্টাব্দ দেয় সুলতান গিয়াস উদ্দিনের বলবনের দ্বিতীয় পুত্র সুলতান নাসির উদ্দিন বগরা খান বাংলায় দেখভালের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ।বগরা খান এর নাম অনুসারে বগুড়ার নামকরণ করা হয়। বগরা ছিল বগুড়া জেলার পূর্বের নাম। ৭ নং সেক্টরের অধীনে ছিল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এই বগুড়া।


করোতোয়া নদীর পাশেই অবস্থিত বগুড়া শহর। বগুড়াকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে এই প্রবাহমান করোতোয়া নদী।বর্তমানে বগুড়া জেলার মোট আয়তন ২৮৯৮.৬৮ বর্গ কিলোমিটার। বগুড়ার দক্ষিণে নাটোর ও সিরাজগঞ্জ, উত্তরে জয়পুরহাট ও গাইবান্ধা, পশ্চিমে নওগাঁ ও নাটোর, এবং পূর্বে জামালপুর জেলা ও যমুনা নদী। এন-৫ মহাসড়ক চলে গেছে বগুড়া জেলার একদম মাঝখান দিয়ে।

 রাজশাহীর রংপুর ও দিনাজপুর জেলা মধ্যে উত্তরবঙ্গের এই অঞ্চলটি ধরা হতো কিন্তু এই তিন জেলায় অনেক বড় প্রশাসনের সুবিধার জন্য ১৮২১ খ্রিস্টাব্দে আদমদিঘী শেরপুর নওখিলা ও বগুড়া থানা দেওয়ানগঞ্জ গোবিন্দগঞ্জ রংপুর জেলা, দিনাজপুর জেলা থেকে লালবাজার ক্ষেতলাল ও গলদাগাছি থানা নিয়ে বগুড়া জেলা গঠিত হয়।


বগুড়া জেলার প্রায় অর্ধাংশের রাজস্ব গ্রহণের জন্য ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে জয়েন ম্যাজিস্ট্রেটকে ক্ষমতা দেওয়া হয়। রাজশাহী জেলার নারায়ণগঞ্জ থানা বগুড়ায় জেলার মধ্যে আনা হয় ১৮ ৩৯ খ্রিস্টাব্দে। রংপুর দিনাজপুর পাবনা ময়মনসিংহ ও রাজশাহী জেলা থেকে ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে ৫৪৯ টি জমিদারি বগুড়া কালেক্টরের অধীনে আনা হয়।


 বগুড়ার অধীনে আগে ২৮৭ টি জমিদারি ছিল। ৪৩৯টি গ্রাম নিয়ে ময়মনসিংহ জেলা থেকে নিয়ে বগুড়া জেলার সারওয়া কান্দি থানার সাথে সংযুক্ত হয় ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে ১১ই সেপ্টেম্বরে ।১৮টি গ্রাম একসাথে যুক্ত হওয়ার জন্য শিবগঞ্জ থানাকে পূর্ণাঙ্গ থানায় রূপান্তরিত করা হয় । একজন কালেক্টর ও একজন ম্যাজিস্ট্রেটের শাসন অধীনে আনা হয় ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে বগুড়া জেলাকে ।

 

বগুড়া জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি

  • মোহাম্মদ আলী : তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন ১৯৫৩ সালে ১৭ই অক্টোবর । রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তার অবদান অনেক ।তার জন্ম ১৯০৯ সালে ১৯ অক্টোবর ।
  • সাবেক রাষ্ট্রপতি লেফটেন্যান্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান: সাবেক রাষ্ট্রপতি লেফটেন্যান্ট জেনারেল জিয়াউর রহমানের জন্ম এই বগুড়াতেই ১৯৩৬ সালে ১৯ জানুয়ারি বগুড়া জেলায় গাবতলী উপজেলায় বাগবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। ২১ এপ্রিল ১৯৭৭ থেকে ৩০ মে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এবং চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে ত্রিশ মেয়ে ১৯৮১সালে আততায়ের হাতে নিহত হন ।
  • হাবিবুর রহমান : হাবিবুর রহমানের জন্ম ১৯০৮ সালে। ৫০ ও ষাট দশকে তিনি বেলজিয়াম অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ড সুইজারল্যান্ড ও বার্মার রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন
  • খুরশিদ আলম: খুরশেদ আলম একজন খ্যাতিনামা গায়ক। তিনি আধুনিক বাংলা গান রবীন্দ্রসংগীত এবং চলচ্চিত্রের গান করেছেন।
  • আনজুমারা বেগম: আনজুমারা বেগম বাংলা ও উর্দু ছায়াছবি তে প্লেব্যাক করেন । বাংলাদেশ টেলিভিশনের একজন নিয়মিত শিল্পী।
  • ফজলুল বারী: ফজলুল বারি পাকিস্তান আমলে স্বাস্থ্য ও সমাজ কল্যাণ অধিদপ্তরে মন্ত্রীতের দায়িত্ব পালন করেন। তার জন্ম ১৯২২ সালে শিবগঞ্জ।

বগুড়া জেলা কি জন্য বিখ্যাত

চলুন তাহলে আজকে জানা যাক বাংলার প্রাচীন নগরী  বগুড়া জেলা কি জন্য বিখ্যাত:
  • দই: বগুড়া নাম শুনলেই প্রথমে যে জিনিসটা সবার মাথায় আসে সেটা হচ্ছে দই।প্রত্যেক জেলাতেই দই পাওয়া যায় ,কিন্তু বগুড়ার দই একটু আলাদা ।
  • মহাস্থানগড়: প্রায় আড়াই হাজার বছরের গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়েছে এই মহাস্থানগড় ।বগুড়া শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার উত্তরে এই ধ্বংসাবশেষ টি অবস্থিত । করতোয়া নদীর পশ্চিমে অবস্থিত মহাস্থানগড়।
  • বেহুলার বাসর ঘর: মহাস্থানগড় বাসস্ট্যান্ড থেকে ২ কিলোমিটার দূরে বেহুলার বাসর ঘর অবস্থিত। বৌদ্ধস্তম্ভ রয়েছে যা সম্রাট অশোক নির্মাণ করেছেন বলে জানা যায় । ৪৫ ফুট স্তম্ভের উচ্চতা।২৪ কোন যুক্ত চৌবাচ্চা সাদৃশ্য যা বেহুলার বাসর ঘর নামে পরিচিত।
  • মিউজিয়াম: মৌর্য সেন পাল ও গুপ্ত যুগের বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী অনেক দেব-দেবীর মূর্তি পাওয়া গেছে মহাস্থানগড় খননের ফলে। যা মাহাস্থানগড়ের উত্তরে অবস্থিত জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
  • জিউৎকুণ্ড : এটি একটি বড় কুপ তার নাম জিউৎকুণ্ড । লোকমুখে প্রচলিত আছে পশুরামের আহত সৈন্যরা এই কূপের পানি পান করে সুস্থ হয়ে যেত ।
  • শিলা দেবীর ঘাট: শিলা দেবীর ঘাট টি হল, করতোয়া নদীর পূর্বপাশে অবস্থিত। পশুরামের বোন ছিলেন শিলাদেবী। হিন্দু বিশ্বাস অবলম্বীরা এখনো প্রতি বছর এই ঘাটে স্নান করতে আসেন এবং একদিন মেলাও বসে এই ঘাটে ।

বগুড়া কি কি আছে

বগুড়া কি কি আছে সেগুলো আজকে জানা যাক:
  • মাহাস্থানগড়
  • ভাসু বিহার
  • যোগীর ভবন
  • ভীমের জঙ্গল
  • খেরুয়া মসজিদ
  • পরশুরামের প্রাসাদ
  • গোকুলমেদ( বেহুলা লক্ষিন্দারের বাসর ঘর)
  • বিহার ধাপ
  • মনকালীর কুন্ডু ধাপ
  • পোড়াদহ মেলা
  • সারিয়াকান্দের পানিবন্দর
  • সান্তাহার ,সাইলো
  • বাবুর পুকুর, শাহজাহানপুর
  • পাঁচটির মাজার ,কাহালু
  • জয় পীরের মাজার ,দুপচাঁচিয়া ইত্যাদি

লেখক এর মতামত

আজকে আমার এই পোষ্টের মধ্যে আপনাদের বগুড়া জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্বন্ধে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করেছি । এই পোস্টটি পড়ে যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে, কিংবা কোন উপকারে আসে। তাহলে অবশ্যই আপনাদের প্রিয়জন বা বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। যেন তারাও বগুড়া জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

টুকিটাকিরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url