কাঁচা খেজুরের রস খেলে কি হয়
কাঁচা খেজুরের রস খেলে কি হয়? খেজুরের রসের অপকারিতা এবংখেজুরের রসের উপকারিতা এ সকল বিষয়ে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি আপনাদের যদি আরো কিছু জানতে চান বা এ বিষয়গুলো বিস্তারিত জানতে চান তবে পুরো পোস্টটি পড়ার অনুরোধ রইল।
প্রিয় পাঠক, খেজুর রস সম্বন্ধে অনেক কিছু প্রশ্ন থাকতে পারে আপনাদের।সেগুলো জানানোর চেষ্টা করেছি আজকে । সকল বিষয়গুলো জানতে চলুন নিচে পড়া শুরু করা যাক।
ভূমিকা
শীতকালে খেজুরের রস খেতে ভালোবাসে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া ভার। খেজুরের রস খুব সুস্বাদু মিষ্টি ও পুষ্টিকর পানিও।আমাদের দ্রুত শরীরের শর্করার চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে।কাঁচা খেজুরের রসে যদি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হয়, তাহলে কিছু মানুষের কিছু পেটের সমস্যা হতে পারে। চলুন আজকে জানতেন পড়া শুরু করা যাক ।
খেজুরের রসের উপকারিতা
কাঁচা খেজুরের রসে বিভিন্ন পুষ্টিমূলক উপাদান থাকে, যেমন ভিটামিন, খনিজ ও আন্টিঅক্সিডেন্ট এগুলি শরীরের স্বাস্থ্যকে উন্নতি করে। নিম্নলিখিত খেজুরের রসের উপকারিতা বর্ণনা করা হলো:
- শর্করা চাহিদা করুন: কাঁচা খেজুরের রসে প্রচুর পরিমানে গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ থাকে। যা আমাদের দ্রুত শরীরের শর্করার চাহিদা পূরণ করে, ফলে আমরা তাড়াতাড়ি কর্মক্ষম হতে পারি। একে প্রাকৃতিক এনার্জি ড্রিংক বলা হয়।
- শীতকালীন রক্তস্বল্পতা: কাঁচা খেজুরের রসে সুপ্ত অবস্থায় থাকে আয়রন। কাঁচা খেজুরের রস জাল দিয়ে গুড় তৈরি করলে এতে আয়রন পাওয়া যায়। গুড় খাবার ফলে শীতকালীন রক্তস্বল্পতা হওয়ার মাত্রা কমে যাবে।
- স্নায়ুকোষ সচল রাখে: খেজুরের রসে থাকা সোডিয়াম ও পটাশিয়াম যা স্নায়ুকোষ এর সাথে যুক্ত হয়ে, স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক চলাচলে সাহায্য করে।
- কোষের ক্ষতি কমাতে: খেজুরের রসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের ক্ষতিকর টক্সিনকে নিষ্ক্রিয় করতে সাহায্য করে। এই টক্সিন কোষের ক্ষতি করতে পারে এবং ক্যান্সারের বিকাশ ঘটাতে পারে না।
- অস্থিরতা দূর কারক: কাঁচা খেজুরের রসে থাকা ম্যাগনেসিয়াম যা শরীরের অস্থিরতা বিষন্নতা ও ক্লান্তি ভাব দূর করে।
- পুষ্টিমূলক উপকারিতা: খেজুরের রসে থাকা ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ইমিউনিটি শক্তি বৃদ্ধি করে, ফলে ঋতু পরিবর্তনকালীন অসুস্থতা কম হয়, শরীর সুস্থ থাকে।
- উচ্চ রক্তচাপ কমাতে: খেজুর গাছের কাঁচা রসে থাকা সোডিয়াম যার শরীরে নাইট্রিক অ্যাসিড এর মাত্রা ব্যালেন্স করে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।পটাসিয়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ ইলেক্ট্রোলাইট, যা রক্তচাপ এবং হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
- আর্থ্রাইটিস প্রতিরোধ: খেজুরের রসে থাকা ক্যালসিয়াম যা হারকে মজবুত করে এবং আর্থারাইটিস প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করে।
- ওজন কমানো: কাঁচা খেজুরের রসে মিষ্টি নামক প্রাকৃতিক স্যাগার রয়েছে। যা শরীরে ধীরগতিতে শোধিত হয় ফলে অতিরিক্ত চর্বি কমিয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- ডাইজেস্টিভ সিস্টেমের উন্নতি: কাঁচা খেজুরের রস মধুমধু মাধুর্য রয়েছে এবং এটি পেটের স্থিতিশীলতা বাড়াতে পারে।
- প্রাকৃতিক বিষমুক্তকরণ: এর মধ্যে থাকা পটাশিয়াম, ফাইবার ও অন্যান্য পুষ্টিমূলক উপাদানের কারণে এটি প্রাকৃতিক বিষমুক্তকরণ হিসেবে কাজ করতে পারে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য: কাঁচা খেজুরের রস কিছু মানুষের জন্য পেটের সমস্যা মেটানোর জন্য সহায়ক হতে পারে। প্রাকৃতিক রেচক, এবং কোষ্ঠকাঠিন্য উপশম সেইসাথে অন্যান্য যৌগ রয়েছে যা মল নরম করতে এবং মলত্যাগকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে।
তবে, এই সব উপকারিতা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আপনাকে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে খেজুরের রস খাওয়ার আগে বা এর প্রয়োজনীয় পরামর্শ সংগ্রহ করা উচিত। কোনো অতিরিক্ত পরিমাণে খেজুরের রস খাওয়া বা যেকোনো প্রকার পরিবর্তন শুরু করার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
খেজুরের রসের অপকারিতা
কাঁচা খেজুরের রসে যদি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হয়, তাহলে কিছু মানুষের কিছু পেটের সমস্যা হতে পারে। এই প্রতিক্রিয়া গুলি নিম্নলিখিত হতে পারে:
- পেট ব্যথা ও গ্যাস সমস্যা: অতিরিক্ত খেজুরের রস পেটের ব্যথা এবং গ্যাসের কারণ হতে পারে। এটি তন্ত্রগুলিতে অশ্লীল প্রক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, যা পেটে অসুস্থতা সৃষ্টি করতে পারে।
- পেটের কোষ্ঠকাঠিন্যতা এবং পেটে ব্যথা: অতিরিক্ত খেজুরের রস পেটের কোষ্ঠকাঠিন্য বা পেটে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে। এটি নিচ বা তল পেটের ব্যথা সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।
- অতিরিক্ত পরিমাণে প্রাকৃতিক স্যাগার: কাঁচা খেজুরের রসে অতিরিক্ত প্রাকৃতিক স্যাগার থাকতে পারে, যা ডাইজেস্টিভ সিস্টেমের কাজে প্রতিবন্ধী হতে পারে এবং পেটের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- কিডনির সমস্যা: যারা ক্রনিক কিডনি ডিজিজে ভুগছেন তাদের খেজুরের রস থেকে দূরে থাকাই ভালো। কারণ এতে থাকে পটাশিয়াম কিডনির সমস্যাকে আরো জটিল করতে পারে।
- ডায়াবেটিস: যারা ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন তাদের খেজুরের রস না খাওয়াই ভালো কারণ এটা থাকা চিনি রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।
- এজমা বা হাঁপানি: যাদের এজমা বা হাঁপানি আছে তাদের সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত কারণ অনেক সময় খেজুরের ঠান্ডা রস এজমা বা হাঁপানি বাড়িয়ে দিতে পারে
- অ্যালার্জি : কিছু মানুষ খেজুরের তৈরি স্যাগার বা অন্যান্য উপাদানের সাথে অ্যালার্জি হতে পারে। এটি পেটের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- রোগ জীবাণু : অনেক সময় খোলা অস্বাস্থ্যকর খেজুরের রস পান করার মাধ্যমে কিছু কিছু রোগ জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে যেমন নিপা ভাইরাস।
- ফরমেন্টেশন রস: খেজুরের কাচা রস অনেক সময় ফার্মেন্টেশন করা হয় এই ফরমেন্টেশন রস অ্যালকোহল বা মদের মত কাজ করে যা শারীরিক মারাত্মক ক্ষতির দিকে ফেলতে পারে।
অতিরিক্ত খেজুরের রস খেওয়ার আগে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। অসুস্থতা বিষয় প্রয়োজনীয় পরামর্শের জন্য ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
কাঁচা খেজুরের রস খেলে কি হয়?
শীতকালে খেজুরের রস খেতে ভালোবাসে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া ভার। খেজুরের রস খুব সুস্বাদু মিষ্টি ও পুষ্টিকর পানিও। আমরা উপরে ইতি মধ্যে আলোচনা করেছি খেজুরের রসের উপকারিতা খেজুরের রসের অপকারিতা। এত গুণ সমৃদ্ধ হওয়া সত্বেও খেজুরের রসে অনেক সময় বিপদ ডেকে আনতে পারে। নিপা ভাইরাস এর মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশ ২০১৮ সালের হিসাব অনুসারে ৩১ জেলাতে এ ভাইরাসের আক্রমণ দেখা গেছে।
সাধারণত শীত মৌসুমে নিপা ভাইরাসের আক্রমণ বেড়ে যায়। নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত পাখির খাওয়া ফলমূল বা রস বা তার মলমু্ত্র মানুষের সংস্পর্শে আসে তখনই এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। তাই আমাদের কাঁচা খেজুরের রস ও পশু পাখির খাওয়া ফলমূল খাওয়া থেকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে । প্রয়োজনে ফুটিয়ে কাঁচা খেজুরের রস খেতে হবে বা জ্বাল বা মশারি গাছে ব্যবহার করতে হবে যাতে বাদুর, পাখি বা কোন প্রাণী খেজুরের রস খেতে না পারে।
খেজুর রস সংগ্রহ
বাংলাদেশে গ্রাম অঞ্চলে খেজুরের রস সংগ্রহ করা হয় খেজুর গাছ কেটে। রস সংগ্রহের জন্য, প্রথমে খেজুর গাছ কেটে একটি কটোর তৈরি করা হয় এরপরে টরোকে পরিষ্কার করা হয়। এক দুই দিনের মধ্যে খেজুর গাছের রস আসা শুরু হয়। খেজুর গাছ থেকে বের হওয়া রসগুলি সংগ্রহ করা হয়।নির্বাচিত খেজুর গাছের বয়স সাধারণত ৫বছর থেকে ৭ বছর হলে। খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহের উপযুক্ত হয়।
আরও পড়ুন :পালং শাকে কি এলার্জি আছে
প্রচলিত সনাতন পদ্ধতি অনুসরণ করে গাছগুলো কাটা হয়। সাধারণত নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময় গাছগুলি পরিষ্কার করা হয়। যারা রস সংগ্রহ করে তাদেরকে গাছি বা গেছে নামে পরিচিত । গাছ পরিস্কারের ১৮ থেকে ২০ দিনের মাথায় বা আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে গাছ কাটা শুরু হয়। তখনই গাছকে চেচে বাসের একটি কঞ্চি বা পাতাড়ি ঢুকিয়ে দেওয়া হয় । যেটা দিয়ে রস আসতে থাকে।
এর সাথে হাড়ি ঝুলানোর জন্য দুটো বাঁশের পেরেক পোতা হয়। রস সংগ্রহের কাজগুলো খুব যত্ন সহকারে নিপুন হাতে করতে হয় । গাছ কাটতে হয় পাতলা পাতলা আবরণ কেটে । প্রতিদিন সকালে রস সংগ্রহ করা হয় ।গাছ ভেদে এক একটি গাছে ভিন্ন পরিমান রস হয়। আবহাওয়া ও মাটির উপর নির্ভর করে গাছের রস মিষ্টি হয়।
আরও পড়ুন :ঠান্ডা পানিতে লেবু খাওয়ার উপকারিতা
সাধারণত তিন-চার দিন রস সংগ্রহ করার পর দুই থেকে তিন দিন গাছ কাটা বন্ধ রাখা হয়। দুই তিন দিন গাছ কাটা বন্ধ রাখার পর যে রসটা সংগ্রহ হয় সেটা অনেক মিষ্টি ও সুস্বাদু হয়। এ রস সংগ্রহের জন্য মাটির হাড়ি ব্যবহার করা হয় যা বাংলার একটি ঐতিহ্য। এই হাড়িগুলো ব্যবহারের পূর্বে খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করে রোদে শুকোতে হয়। খেজুর গাছের রস সংগ্রহ চলে এপ্রিল মাস পর্যন্ত।
খেজুরের রসের তারি
বাংলায় তালের বা খেজুরের তারি বলতে বুঝিয়ে থাকে, রস সংগ্রহের পর রেখে দেওয়া হয় একটি বিশেষ প্রক্রিয়াজাত করার জন্য।কাঁচা খেজুরের রসের তারি বা মদ তৈরি করার প্রক্রিয়া মূলত সংশ্লিষ্ট উপাদানগুলির ফারমেণ্টেশন নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করা হয়।গ্রামীণ উপায় খেজুরের তারি তৈরির পদ্ধতি লিখার চেষ্টা করছি।
আরও পড়ুন :প্রতিদিন কতটুকু কালোজিরা খাওয়া উচিত
সবচেয়ে প্রাথমিক ধাপ হ'ল পরিষ্কার ও মানসম্মত খেজুর গাছের কাঁচা রস সংগ্রহ করা। নিশ্চিত করা পোকামাকড় না থাকে। প্রয়োজনে খেজুর গাছের কাঁচা রস ভালোভাবে ছাকনি দিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। রস রাখার জন্য গ্রামের সাধারণত মাটির হাড়ি ব্যবহার করা হয়।
গাজন বা ফরমেন্টেশন প্রক্রিয়ার জন্য রসগুলোকে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখা হয়। যাতে করে ব্যাকটেরিয়া ফারমেন্ট হতে পারে। গাজন প্রক্রিয়া শেষ হলে খাওয়ার উপযোগী হয়।তবে এই খেজুরের রসের তারি অনেকের স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই আমাদের উচিত খেজুরের রসের তারি থেকে বিরত থাকা।
লেখক এর মতামত
প্রিয় পাঠক, আজকে আপনাদেরকে খেজুরের রসের অপকারিতা, খেজুরের রসের তারি,খেজুর রস সংগ্রহ কিভাবে করতে হয় ইত্যাদি বিষয়ে জানানোর আফরান চেষ্টা করেছি । এ সকল বিষয়গুলি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে, শেয়ার করে দিবেন অন্যকে জানার সুযোগ করে দেবেন।
টুকিটাকিরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url