খেজুর গুড়ের জন্য বিখ্যাত কোন জেলা
বাংলাদেশে খেজুর গুড়ের জন্য বিখ্যাত কোন জেলা ? জানতে চান খেজুরের গুড়ের পুষ্টি উপাদান। তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আজকের এই পুরো আর্টিকেলে আমরা জানাতে চলেছে শীতকালীন পিঠা তৈরীর অন্যতম উপাদান খেজুরের গুড় খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে।
চলুন জানা যাক খেজুরের গুড়ের উপকারিতা, খেজুরের গুড়ের অপকারিতা খেজুরের গুড় সম্পর্কে খুঁটিনাটি প্রত্যেকটা বিষয়, আশা করি পুরো আর্টিকেলটি পড়লে আপনি উপকৃত হবেন, জানতে পারবেন খেজুরের গুড় সম্পর্কে জানা-অজানা তথ্য। তাই পুরো আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইলো।
ভূমিকা
বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। এক এক ঋতু নিয়ে আসে আসে ভিন্ন ভিন্ন আবহাওয়া। শীতকালীন এই হিমশীতল আবহাওয়ায় বাঙ্গালীদের বাড়িতে বাড়িতে পিঠে তৈরীর ধুম পড়ে যায়। এক্ষেত্রে খেজুরের বিকল্প কিছুই হতে পারে না। গ্রাম বাংলার প্রায় সকল বাড়ি থেকেই খেজুরের মিষ্টি গন্ধ পাওয়া যায়। শীতের শুরু থেকেই খেজুরের গুণের সংগ্রহ চলতে থাকে। আজকে আমরা জানাবো খেজুরের গুড় খাওয়ার নিয়ম,খেজুরের গুড়ের উপকারিতা, খেজুরের গুড়ের পুষ্টি উপাদান।
খেজুরের গুড়ের পুষ্টি উপাদান
খেজুরের গুড় সুস্বাদু মিষ্টি ও মুখরোচক খাবার, ও শীতকালীন পিঠা তৈরির উপকরণ এরমধ্যে সীমাবদ্ধ নয় এর পুষ্টিগুণ রয়েছে। জেনে নেই প্রায় ১০০ গ্রাম খেজুরের গুড়ের পুষ্টি উপাদান গুলো।
মূল উপাদান %
- জল ৫১%
- কার্বোহাইড্রেট ৪৯%
- প্রোটিন ০%
- ফ্যাট ০%
মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস সমূহ:
- এনার্জি ১৯০ক্যালরি
- ফ্যাট ০ গ্রাম
- স্যাচুরেটেড ফ্যাট ০ গ্রাম
- কোলেস্টেরল ০ মিলিগ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট ৪৯ গ্রাম
- প্রোটিন ০.০৫ গ্রাম
আরও পড়ুন:
খনিজ উপাদান:
- ক্যালসিয়াম ৪০ মিলিগ্রাম
- আয়রন ২ মিলিগ্রাম
- পটাসিয়াম ২০ মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম ৬৪ মিলিগ্রাম
এছাড়া খুবই সামান্য পরিমাণে খনিজ উপাদান যেমন: জিঙ্ক ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস,ম্যাঙ্গানিজ, কপার ও ক্লোরাইড পাওয়া যায়। এ ছাড়া খুবই সামান্য পরিমাণে কিছু ভিটামিন যেমন: ভিটামিন এ ভিটামিন বি ১২, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি,ভিটামিন ই, ভিটামিন কে পাওয়া যায়। খেজুরের রস ও ঝোলা গুড় ডায়েটারি ফাইবারের একটি ভালো উৎস।
খেজুরের গুড়ের উপকারিতা
নিম্নোক্ত খেজুরের গুড়ের উপকারিতা গুলো বর্ণনা করা হলো:
- খেজুর গুড় যৌগিক কার্বোহাইড্রেটের একটি ভালো উৎস যা ভালো হজম করতে সাহায্য করে এবং শক্তির মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
- খেজুরের গুনে থাকা আইরন রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- খেজুরের গুড় ক্যালসিয়ামের একটি ভালো উৎস এটি হাড়কে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।
- এতে থাকা খাদ্যতালিকাগত ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম এবং অনুপযুক্ত মলত্যাগের মতো পরিপাকজনিত রোগের চিকিৎসায় সাহায্য করে।
- খেজুরের রসের গুড়ে থাকা এন্টিটক্সিন উপাদান শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে।
- এটি পানি ধরে রাখা এবং ফোলাভাব কমিয়ে ওজন ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করে।
- খেজুরের গুড়ের ভেষজ ঔষধি গুণাবলী মহিলাদের মাসিকের ক্র্যাম্প এবং পেটের ব্যথা পরিত্রানে সাহায্য করে।
- এর ঔষধি গুণাবলী মাইগ্রেনের ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে।
- খেজুরের গুড়ে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট শুষ্ক কাশি এবং ঠান্ডার মতো সাধারণ অসুস্থতা নিরাময়েও সাহায্য করে।
- যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তারা নিয়মিত খেজুরের গুড় খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- খেজুরের রসের গুড়ে থাকা ভিটামিন চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- খেজুর গুড়ে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের মিনারেল যা শরীরের প্রতিটি অংশের জন্য প্রয়োজনীয় এবং স্বাস্থ্যকর একটি ব্যালান্স বান্ধব তৈরিতে সাহায্য করে।
- গরমীয় গুণসমৃদ্ধ খেজুর গুড়ে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করতে পারে এবং শরীরের ঠান্ডায় অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে
খেজুরের গুড়ের অপকারিতা
- উচ্চ শর্করা এবং ক্যালোরি: খেজুরের গুড়ে উচ্চ পরিমাণে শর্করা ও ক্যালোরি থাকতে পারে, যা শরীরে অতিরিক্ত শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় এবং শারীরিক ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
- শরীরে গ্যাস উৎপন্ন করা: খেজুরের গুড়ে প্রাকৃতিক ফাইবার ও শর্করার উচ্চ পরিমাণের কারণে কিছু মানুষের পেটে গ্যাস উৎপন্ন হতে পারে এবং এটি ডাইজেস্টিভ সিস্টেমের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
- অতিরিক্ত খাদ্যমূল্য: খেজুরের গুড়ে অতিরিক্ত ক্যালোরি, শর্করা এবং কার্বোহাইড্রেট থাকতে পারে যা যদি অতিরিক্ত সময় খাওয়া হয়, তাহলে ওজন বাড়াতে পারে এবং সমস্যার জন্য হার্টের স্বাস্থ্যে ঝুঁকি বাড়াতে পা
- অ্যালার্জি সৃষ্টি করা: কিছু মানুষের জন্য খেজুরের গুড়ে অ্যালার্জির ঝুঁকি থাকতে পারে, যা ত্বক উদাহরণস্বরূপ একটি অ্যালার্জিক রেশ বা অন্যান্য অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
- ডায়াবেটিস বা হার্ট রোগের জন্য ঝুঁকি: যারা ডায়াবেটিস বা হার্ট রোগে আক্রান্ত, তাদের জন্য খেজুরের গুড়ে অতিরিক্ত শর্করা এবং ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণ করতে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
- আলসারেটিভ কোলাইটিস: আয়ূর্বেদিক চিকিৎসকদের মতে মাছ আর গুড় একসাথে খেলে পরিপাকতন্ত্রের আলসার হতে পারে।
- ডায়রিয়া ও আই,বি,এস সৃষ্টি: অনেকের পরিপাকতন্ত্র গুড় জাতীয় খাবার হজমের সমস্যা তৈরি করে। যার ফলে পাতলা পায়খানা ও আই বি এস(ইরিটেবল বাউল সিনড্রোম) মত সমস্যা সৃষ্টি হয়।
খেজুরের গুড় খাওয়ার নিয়ম
খেজুরের গুড় হল একটি ঐতিহ্যবাহী, অপরিশোধিত চিনি যা নির্দিষ্ট খেজুরের রস থেকে তৈরি। এটির একটি অনন্য, সমৃদ্ধ স্বাদ রয়েছে যা উভয়ই মিষ্টি এবং ক্যারামেলের মতো। খেজুর গুড় খাওয়ার সময় কিছু সহজ নিয়ম মেনে চলতে হয়। প্রথমত, একটি ভাল মানের পণ্য নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ। খেজুরের গুড় সন্ধান করুন যা ১০০% রস থেকে তৈরি হয়, এতে চিনি বা রাসায়নিক নেই।
আরও পড়ুন:
দ্বিতীয়ত, খেজুরের গুড় অল্প পরিমাণে খাওয়া যায়। আপনি দীর্ঘদিন যদি খেজুরের গুড় খেতে চান তাহলে একটি ছোট টুকরা দিয়ে শুরু করুন এবং পর্যবেক্ষণ করুন কোন শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হয় কিনা।তৃতীয়ত, খেজুরের গুড় তাজা খাওয়া ভালো। এটি একটি শীতল, শুষ্ক জায়গায় ছয় মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যেতে পারে, তবে সেরা স্বাদের জন্য, কেনার এক বা দুই মাসের মধ্যে এটি খেয়ে নিন।
আরো পড়ুন :
খেজুর গুড় খাওয়ার অনেক উপকারিতা আছে, তবে কিছু খেজুরের গুড়ের অপকারিতা আছে, খাবার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়মও মেনে চলতে হবে। খেজুরের গুড় শুধুমাত্র পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। মিষ্টির ভারসাম্য বজায় রেখে অন্যান্য খাবারের সঙ্গে খেজুরের গুড় খাওয়া উচিত।সেরা স্বাদের জন্য খেজুরের নতুন গুড় বাছাই করতে হবে।
আরো পড়ুন :
খেজুরের গুড়ের জনপ্রিয়তা আজ বিশ্বজোড়া। বিশেষ করে ভারতীয়, বাংলাদেশি এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন স্বাদের পিঠা পায়েস তৈরিতে এর জুড়ি নেই। গ্রাম বাংলার শীতকালীন পিঠা তৈরিতে অন্যতম উপকরণ খেজুরের গুড়।আসুন জেনে নেই খেজুরের গুড়ের কিছু রেসিপি ও পিঠা নাম:
- খেজুর গুড়ের পায়েস
- খেজুরের গুড়ের বরফি
- খেজুরের গুড়ের চা
- খেজুরের গুড় দিয়ে জিলাপি
- খেজুরের গুড়ের ভাপা পিঠা
- খেজুরের গুড় নারকেল দিয়ে ভাপা পিঠা
- খেজুরের গুড়ের সন্দেশ
- খেজুরের গুড়ের দুধ চিতই
- খেজুরের গুড়ের ফিরনি
- খেজুরের গুড়ের পাটিসাপটা
খেজুর গুড়ের জন্য বিখ্যাত কোন জেলা
বাংলাদেশে সুস্বাদু ও খাঁটি খেজুর গুড়ের জন্য বিখ্যাত কোন জেলা ? এই শীতের মৌসুমে এ প্রশ্ন সবাই করে থাকে। বাংলাদেশের কুষ্টিয়া, মাগুরা, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ঝিনাইদহ সাতক্ষীরা,চুয়াডাঙ্গা রাজবাড়ী,ফরিদপুর,এবং যশোরের প্রায় সব উপজেলায় প্রচুর খেজুর গুড় পাওয়া যায়। কিন্তু যশোর জেলার খাজুরা খেজুর গুড়ের জন্য বিখ্যাত। আরো জানিয়ে রাখি যশোর কিন্তু খই এর জন্যও বিখ্যাত।এছাড়াও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় প্রচুর পরিমাণে খেজুরের গুড়ের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।
লেখক এর মতামত
আজকে আমরা জানলাম শীতকালীন পিঠের অন্যতম উপাদান খেজুরের গুড় খাওয়ার নিয়ম, খেজুর গুড়ের জন্য বিখ্যাত কোন জেলা, খেজুরের গুড়ের উপকারিতা,খেজুরের গুড়ের অপকারিতা,খেজুরের গুড়ের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে। আমাদের এই পোস্টটি পড়ে আপনার যদি উপকারে আসে তাহলে আমাদের লেখা সার্থক হবে। আপনাদের মতামত আমাদের লেখার মান কে আরও বৃদ্ধি করবে।
টুকিটাকিরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url