টাইটানিক জাহাজে কতজন যাত্রী ছিল

টাইটানিক জাহাজে কতজন যাত্রী ছিল ? এবং টাইটানিক জাহাজ ডুবতে কত সময় লেগেছিল ? এই সমস্ত বিষয় নিয়ে আজকে আলোচনা করতে যাচ্ছি। আপনারা হয়তো টাইটানিক জাহাজ সম্বন্ধে জানতে অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেছেন । আজকে টাইটানিক জাহাজের রহস্য এবং টাইটানিক জাহাজ কত সালে ডুবেছে এই সমস্ত বিষয়ে জানতে নিচের পুরো পোষ্টটি পড়ার অনুরোধ রইলো ।
টাইটানিক জাহাজে কতজন যাত্রী ছিল
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাদের টাইটানিক জাহাজ নিয়ে জানতে অনেক আগ্রহী। তাহলে আজকে চলুন আমরা টাইটানিক জাহাজের ইতিহাস ,টাইটানিক জাহাজ কত সালে ডুবেছে এবংটাইটানিক জাহাজের বর্তমান অবস্থা সম্বন্ধে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করেছি । দয়া করে আমাদের সঙ্গেই থাকুন । তাহলে এই টাইটানিক জাহাজ সম্বন্ধে পুরোপুরি জানতে পারবেন ।

ভূমিকা

টাইটানিক জাহাজের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯০৯ সালের ৩১ শে মার্চ । এরপর ১৯১২ সালে ১০ এপ্রিল মোট ২২৩ জন যাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে ইংল্যান্ডের একটি শহর থেকে নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে । জাহাজটি ডুববে না বলে মনে করা হয়েছিল । কিন্তু তবুও এটি প্রথম সমুদ্রযাত্রায় ডুবে গিয়েছিল । এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে মানুষ টাইটানিকের গল্পে মুগ্ধ হয়ে আসছে। তাহলে আজকে চলুন টাইটানিক সম্বন্ধে বিস্তারিত জানা যাক।

টাইটানিক জাহাজ কত সালে আবিষ্কার?

১৯৮৫ সালে সাইজ স্ক্যান সোনার পদ্ধতির মাধ্যমে আবিষ্কৃত হয় ১৯১২ সালে ডুবে যাওয়া টাইটানিক জাহাজ। ঐতিহাসিক টাইটানিক জাহাজ খুঁজে পাওয়া ছিল অনেক দুরূহ। গভীর উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে জাহাজটি খুঁজে পাওয়ার অনেক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। সমুদ্রের পৃষ্ঠে থেকে প্রায় ৩৮০০ মিটার বা ১২৪৬৭ ফুট গভীর মহাসাগরের উতলে ডুবে আছে।

টাইটানিক জাহাজের ইতিহাস

“টাইটান” নাম থেকে টাইটানিক নামের নামকরণ করা হয়। “টাইটান” শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ থেকে, পুরান গ্রিক শক্তিশালী দেবতা টাইটান যাকে গ্রিক মানুষরা মনে করত সৃষ্টির দেবতা। বৃহৎ আকার জাহাজটি পূর্ণাঙ্গ নাম RMS TITANIC বা ROYEL MAIL SHIP TITANIC এর নাম্বার 390904 ।Thoms Andrews যিনি টাইটেলের জাহাজের ডিজাইন করেন । 


সামুদ্রিক ঝড় বা জলোচ্ছ্বাস এর মধ্যে জাহাজের যেন কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে চিন্তা করে এই বৃহৎ আকার জাহাজের ডিজাইন তৈরি করেন । এর নির্মাণ ব্যয় প্রায় ৭.৫ মিলিয়ন ডলার জাহাজটির দৈর্ঘ্য ছিল ৮৮২ ফুট ২ ইঞ্চি প্রস্থ ৯২ ফুট টাইটানিকের ওজন প্রায় ৬০ হাজার ৩২৮ টন এত বৃহৎ আকৃতির জাহাজ তখনকার সময় কল্পনা করা ছিল অনেক কঠিন।


টাইটানিক নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯০৯ সালের ৩১শে মার্চ। “হোয়াইট স্টার লাইন আর” নামক ব্রিটিশ শিপিং কোম্পানি এর নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ইংল্যান্ডের বেলফার্স্ট এর Harland & Wolff জাহাজ তৈরির কারখানায়। International Mercantile Marine Company এবং মার্কিন ধনুকূপ John Pierpont Morgan এর অর্থ জাহাজের কাজটি শেষ হয়। 

আর এম এস টাইটানিক ব্রিটিশ যাত্রীবাহী জাহাজ ১৯১২ সালের ১০ এপ্রিল নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে সাউদাম্পটন ইংল্যান্ডের একটি শহর থেকে।

টাইটানিক জাহাজে কতজন যাত্রী ছিল

৩৫০০৪৭ জন যাত্রী ও ক্রু জাহাজটি বহনের ব্যবস্থা ছিল। প্রথম শ্রেণীর যাত্রীদের জন্য ছিল বিলাসবহুল ডাইনিং সেখানে প্রায়ই ৫৫০ জন একসঙ্গে বসে খেতে পারত। যাত্রীদের আরাম-আয়েশ বিনোদনের জন্য ছিল বিশাল লাইব্রেরী, ব্যয়বহুল ক্যাফে, ছিল বিলাসবহুল তুর্কির বাথ, জুয়া খেলার কোট, জিমনেসিয়াম এবং সুইমিংপুল প্রথম শ্রেণীর ও দ্বিতীয় শ্রেণি আলাদা আলাদা ব্যবস্থা।
 

যাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রথম শ্রেণীর জন্য তিনটি দ্বিতীয় শ্রেণীর জন্য চারটি লিফটের ব্যবস্থা ছিল। সেই সময়ের আধুনিক প্রযুক্তির বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা ছিল জাহাজটিতে।১৯১২ সালের ১০ই এপ্রিল মোট ২২২৩ জন যাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করে সাউদাম্পটন ইংল্যান্ডের একটি শহর থেকে নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে। প্রথম শ্রেণী ৩২৫ জন, দ্বিতীয় শ্রেণী ২৮৫ জন, তৃতীয় শ্রেণীতে ৭১০ জন, এবং কর্মী সংখ্যা ৮৯৯ জন নিয়ে যাত্রা করে।জাহাজের ভাড়া ছিল প্রথম শ্রেণীর জন্য ৩১০০ ডলার এবং তৃতীয় শ্রেণীর জন্য ৩২ ডলার।

টাইটানিক জাহাজ কত সালে ডুবেছে

১৯১২ সাল ১৪ এপ্রিল হিম শীতল চাঁদহীন এক রাত যাত্রীবাহী আর এম এস টাইটানিক ধাক্কা লাগে ১২৫ মিটার বা ৪১০ ফুট দীর্ঘ আইসবার্গ এর সাথে সংঘর্ষের ঘন্টা তিনেকের মধ্যে জাস্ট ডুবে যায়।

টাইটানিক জাহাজ কেন ডুবেছিল

সাউদাম্পটন থেকে নিউইয়র্ক চাওয়ার সময় নির্ধারণ ছিল ৬ দিন। জাহাজটি তখন আটলান্টিক সাগরে যাত্রা চতুর্থতম দিন ১৯১২ সালের ১৪এপ্রিল। Amerika নামের এক জাহাজ থেকে রেডিওর মাধ্যমে টাইটানিককে সংবাদ পাঠানো হয় দুপুর দুইটার সময় বলা হয় সামনে বিশাল আইসবার্গ রয়েছে । পরবর্তীতে Mesaba নামের আরো একটি এর জাহাজের রেডিও থেকেও পাঠানো হয় সতর্কবাণী ।

Jack Phillips এবং Harold Bride ওয়ারলেস রেডিও অপারেটর হিসেবে টাইটানিকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। রেডিও অপারেটর দ্বয় এই তথ্যটি টাইটানিকের নিয়ন্ত্রণ মূল কক্ষে জানানোর প্রয়োজন মনে করেননি। SS Californian নামের জাহাজথেকে দুর্ঘটনা চল্লিশ মিনিট আগে টাইটানিকের সাথে যোগাযোগ চেষ্টা করে এবং আইসবার্গ সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করে ।
 

রেডিও অপারেটর Jack Phillips বিষয়টার উপর গুরুত্ব না দিয়ে রাগান্বিত স্বরে ব্যস্ততার কথা জানায়। কোন প্রকার ফিরতি মেসেজ না পাওয়ায় SS Californian শিপের অপারেটর রেডিও সেট বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েন অনেকের ধারণা সামান্য একটু ভুলের জন্য এই সুবিশাল টাইটানিক জাহাজটি রাত ১১:৪৫ মিনিটে আটলান্টিক মহাসাগরে চিরতরে হারিয়ে যায়। মৃত্যু হয় ১৫১৩ জন যাত্রীর।

টাইটানিক জাহাজের বর্তমান অবস্থা

RMS TITANIC ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় দক্ষিণ দক্ষিণ পূর্ব নিউফাউন্ডল্যান্ড থেকে ৬০০ কিলোমিটার দূরে প্রায় ১২৪৬৭ ফুট সমুদ্রের গভীরে। বিস্ময়কর এই জাহাজ যে জায়গা ডুবি ছিল তার নাম Grand Banks of Newfoundland । ১৯৮৫ সালের পূর্বে এর কোন সঠিক স্থান খুঁজে পাওয়া যায়নি। অবশেষে IFREMER (French Research Institute for Exploitation of the Sea) এবং WHOI (Woods Hole Oceanographic Institution) এক দল গবেষক টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাই।

 অনেক আঘাত পাওয়া সত্ত্বেও জাহাজের সামনের স্পষ্টভাবে বোঝা যায় ও তুলনামূলকভাবে পেছনের অংশটি সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। বিশাল ওজনের জন্য এবং জাহাজে থাকা প্রচুর মালামাল ডুবে যাওয়ায় স্থানকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। টাইটানিকের ধ্বংসস্তূপ থেকে গবেষকরা মূল্যবান জিনিস খুঁজে এনেছেন। টাইটানিক ডুবে যাওয়া স্থান থেকে অসম্ভব সব পরিকল্পনা করেও সমুদ্রের গভীর থেকে বহু জিনিস তুলে আনা সম্ভব হয়নি। 

গবেষকদের মতে টাইটানিকের অবস্থা সমুদ্রের তলদেশে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

টাইটানিক জাহাজ ডুবতে কত সময় লেগেছিল

Edward John Smith ছিলেন টাইটানিক জাহাজের ক্যাপ্টেন ।১৫ বছরের অভিজ্ঞতা তার পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন যার তত্ত্বাবধানে জাহাজ ছেড়ে যায়। ক্যাপ্টেনের যখন আইচবার্গ চোখে পড়ে তখন তিনি জাহাজের গতি সামান্য দক্ষিণ দিকে করেন। দক্ষিণ দিকে ফেরানোর সাথে সাথে চোখে পড়ে আরও একটি বিশাল আইচবার্গ। 

ততক্ষণে পুনরায় ফাস্ট অফিসার জাহাজটিকে বাম দিকে নেওয়ার জন্য বলেন বা তখনই জাহাজটি বন্ধ করে দেন। জাহাজটি তখন ডান দিকের আইচবার্গের সাথে ঘর্ষণের ফলে জাহাজের ৯০ মিটার অংশে চিরে দেখা যায়। আসলে আইসবার্গ ভালোভাবে বোঝা যায় না কারণ এর আট ভাগের সাত ভাগে থাকে পানির নিচে।


চারটে পানিপূর্ণ কম্পার্টমেন্ট নিয়ে চলার ক্ষমতা ছিল টাইটানিকের কিন্তু যখনই পাঁচ নাম্বার কম্পার্টমেন্ট পানিপূর্ণ হয়ে যায় তখনই জাহাজের অতিরিক্ত ওজনের কারণে সামনের দিকে সামনের দিকে তলিয়ে যেতে থাকে। ক্যাপ্টেন চারিদিকে জরুরী বিপদ সংকেত পাঠিয়ে দেন এবং ১৫ তারিখ মধ্যরাত ১২.০০ সময় জাতিরা নিজের প্রাণ বাঁচাতে লাইফ বোট করে বিভিন্ন দিকে বের হয়ে পড়ে।

 রাত ০২.০৫ মিনিটে জাহাজের সামনের দিক পানির সম্পন্ন কাছাকাছি চলে যাই। ০২.১০ মিনিটে জাহাজের পিছন দিকটা অপরের দিকে উঠতে থাকা । ০২.১৭ মিনিটে অতিরিক্ত ওজনের জন্য পেছনের দিকটা পুরোপুরি ভেঙ্গে যায় ।০২.২০ মিনিটে জাহাজের বাকি অংশ ডুবে যায় ।প্রায় দুই ঘন্টা ৪০ মিনিট সময় ধরে পুরো জাহাজ ডুবে যায়।

টাইটানিক জাহাজের রহস্য

জাহাজটিকে ডুবে যায় না বলে মনে করা হয়েছিল, এবং তবুও এটি তার প্রথম সমুদ্রযাত্রায় ডুবে গিয়েছিল। এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে মানুষ টাইটানিকের গল্পে মুগ্ধ হয়ে আসছে।টাইটানিক কী কারণে ডুবেছিল তা নিয়ে অনেক তত্ত্ব রয়েছে। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে জাহাজটি হিমশৈলের শক্তি সহ্য করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল না। 

অন্যরা বিশ্বাস করেন যে জাহাজের ডিজাইনাররা টাইটানিক তৈরি করার সময় ভুল করেছিলেন।এখনও অন্যরা বিশ্বাস করেন যে টাইটানিক ডুবে নাশকতার ভূমিকা থাকতে পারে। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে বীমার অর্থ সংগ্রহের জন্য কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে জাহাজটি ডুবানোর চেষ্টা করেছে।কারণ যাই হোক না কেন, টাইটানিকের ডুবে যাওয়া ইতিহাসের অন্যতম রহস্যময় এবং দুঃখজনক ঘটনা হিসেবে রয়ে গেছে।টাইটানিক ডুবে যাওয়া ইতিহাসের অন্যতম কুখ্যাত সামুদ্রিক বিপর্যয়।


বিপর্যয়ের কারণগুলি বছরের পর বছর ধরে বিতর্কিত হয়েছে, এবং এখনও কোন স্পষ্ট ঐক্যমত নেই। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে জাহাজটি কেবল দুর্ভাগ্যজনক ছিল এবং আইসবার্গ এড়ানোর কোন উপায় ছিল না। অন্যরা বিশ্বাস করেন যে জাহাজের নকশাটি ত্রুটিপূর্ণ ছিল এবং জাহাজটি কখনই এমন বরফের পরিস্থিতিতে যাত্রা করা উচিত ছিল না। 

কারণ যাই হোক না কেন, টাইটানিক ২০ শতকের সবচেয়ে আকর্ষণীয় রহস্যগুলির মধ্যে একটি।অনেকেই মনে করে টাইটানিক অভিশাপ এর কারণে ধ্বংস হয়েছিল। এক রহস্যময় কাহিনী আছে বলা হয়ে থাকে চুপিসারে প্রিন্সেস অব আমেন রা নামে মিশরীয় এক অভিশপ্ত রাজকুমারীর মমি ছিল টাইটানিক জাহাজে যার অভিশাপের কারণেই টাইটানিক বিপদগ্রস্ত হয়।

লেখকের মতামত

টাইটানিক জাহাজ কত সালে আবিষ্কার হয় এবং টাইটানিক জাহাজ কেন ডুবেছিল ? টাইটানিকের পুরো খুঁটিনাটি ব্যাপার সম্পর্কে আমরা জানানোর চেষ্টা করেছি আমাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে । আশা করি পুরো পোস্ট টুকু পড়ে আপনারা টাইটানিক সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে পারবেন। যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করে দেবেন । যেন তারাও টাইটানিক সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

টুকিটাকিরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url