মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায়
মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায় গুলো নিয়ে আজকে আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করতে যাচ্ছি।মানসিক রোগের শারীরিক লক্ষণ গুলো কি আপনার কি জানা আছে? আসুন তাহলে আজকে এই সম্বন্ধে বিস্তারিত জানা যাক।
আমরা কমবেশি অনেকেই মানসিক সমস্যায় ভোগী। তা আমরা অনেকেই বুঝতেই পারি না।মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের ১০টি উপায় গুলো নিচে জানানো হয়েছে। চলুন তাহলে বিস্তারিত জেনে নেই।
ভূমিকা
মানসিক অসুস্থতা লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করে। এই মানসিক সমস্যাগুলো যখন আমাদের মধ্যে বেড়ে যায় তখন মানুষ অস্বাভাবিক আচরণগুলো করতে থাকে। এগুলো আমরা অনেক সময় বুঝতে পারি না। তখন আমরা সে মানুষগুলোকে বলে থাকি জিনে ধরছে কিংবা ভুতে ধরছে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এমন ভাবা ঠিক নয়। সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।
আরো পড়ুন:পাবনা মানসিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
আমরা একটু তার সাথে সহানুভূতি আচরণ দেখালে কিংবা তাকে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করলে। সে আগের মত অবস্থায় ফিরে আসতে পারে। আমাদের সবার উচিত তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করা। তাদেরকে বুঝতে সাহায্য করা। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা যেন এমন সমস্যা মধ্যে কাউকে পড়তে না হয়।
মানসিক রোগের শারীরিক লক্ষণ
- সব সময় মেজাজ দেখানো ও খিটখিটে ভাব।
- নিজের মানুষগুলোকে নিজের শত্রু ভাবা।
- সিদ্ধান্ত নিতে না পারা।
- নিজের কাজগুলোকে আর ভালো না লাগা।
- খাবারের ওপর খুব অরুচি কিংবা খুব বেশি পরিমাণে খাওয়া।
- হঠাৎ খুব জোরে হাসা বা কান্না করা কোনো কারণ ছাড়াই।
- নিজের সাথে নিজে কথা বলা।
- নিজেকে নিজে ঘরে বন্দী করে রাখা।
- কোন কারণ ছাড়াই তো যেতে হওয়া।
- নিজেকে অন্যদের কাছ থেকে আলাদা আলাদা ভাবা বা আলাদা করে রাখা।
- দুই সপ্তাহর বেশি সময় ধরে বিষণ্ণতায় ভোগা বা ভালো না লাগা মন খারাপ করে থাকে।
- সবার সাথে খুব খারাপ আচরণ করা।
- কোন কারণ ছাড়াই অন্য মানুষদেরকে সন্দেহ করা।
- প্রতিদিন নিয়মিত কাজ যেমন গোসল,হাতমুখ ধোয়া, ব্রাশ করা, এইরকম কাজগুলো আর না করা।
- গায়েবি আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে এমনটা হলে।
- ঘুম কমে যেতে পারে বা অনেক সময় বেড়ে যেতে পারে।
- যে কাজ করছে ওই কাজ বারবার করা।
- যে কাজগুলো করলে সে আনন্দ পেতো সে সমস্ত কাজগুলো করলে বিরক্ত হওয়া, ভালো না লাগা, আনন্দ না পাওয়া।
- এত পরিমাণে নিজের ওপর বিতৃষ্ণা আসে যে সে সুইসাইড করতে চায়।
- মানুষের উপর বিশ্বাস কমে যাওয়া।
মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায়
- পেশাদার সহায়তা চাও: মানসিক অসুস্থতা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য আপনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে পারেন। তা হল চিকিৎসকের সহায়তা নেওয়া। যেমন থেরাপিস্ট, পরামর্শদাতা, এবং মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা বুঝতে এবং মোকাবেলা করার জন্য প্রশিক্ষিত। তারা আপনাকে আপনার নির্দিষ্ট প্রয়োজন অনুসারে প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা রোগ নির্ণয় করতে সাহায্য করবে।
- স্বাস্থ্যকর জীবনধারা: চিকিৎসকের সহায়তা পাওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর জীবনধারার অনুশীলনগুলি গ্রহণ করা মানসিক অসুস্থতার প্রভাব পরিচালনা এবং উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে অবদান রাখে।
- শারীরিক কার্যকলাপ:নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে বলে প্রমাণিত হয়েছে। ব্যায়াম এন্ডোরফিন নিঃসরণ করে, যাকে প্রায়ই "ফিল-গুড" হরমোন বলা হয়। এই এন্ডোরফিনগুলি আপনার মেজাজকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।উদ্বেগ এবং বিষণ্নতার লক্ষণগুলি কমাতে পারে এবং সামগ্রিক মানসিক সুস্থতার উন্নতি করতে পারে।
- সুষম খাদ্য:একটি স্বাস্থ্যকর এবং সুষম খাদ্য বজায় রাখা আপনার মানসিক সুস্থতায়ও অবদান রাখতে পারে। মাছ, গোটা শস্য, ফল এবং সবজিতে পাওয়া ওমেগা -3 ফ্যাটি অ্যাসিডের মতো কিছু পুষ্টি উপাদান যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতার বাড়াতে পারে।। চিনিযুক্ত এবং প্রক্রিয়াজাত খাবারের অত্যধিক ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। কারণ তারা আপনার শক্তির মাত্রাকে খারাপ ভাবে প্রভাবিত করতে পারে এবং অলসতা বা বিরক্তির অনুভূতি বাড়িয়ে তুলতে পারে।আপনার দৈনন্দিন রুটিনে পুষ্টিকর খাবার অন্তর্ভুক্ত করলে শুধুমাত্র আপনার শারীরিক স্বাস্থ্য নয় আপনার মানসিক স্বাস্থ্যকেও ভালো রাখতে সাহায্য করবে।
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম:পর্যাপ্ত মানের ঘুম আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশ্যক। না ঘুমালে মানসিক অসুস্থতার লক্ষণগুলিকে আরও খারাপ করতে পারে। প্রতি রাতে প্রায় ৭-৯ ঘন্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুমের চেষ্টা করুন।
- কাজে মনোযোগ দিন: আমরা মানুষ সব সময় কিছু না কিছু নিয়ে চিন্তা করতেই থাকি। যেমন পিছনে কি ফেলে এসেছি,সামনে কি হবে।এই সকল চিন্তা করতে থাকে। অতীতে কি হল,কে আমাকে কষ্ট দিলো,কিংবা কি হারিয়ে এসেছি,এই সকল বিষয়গুলো মানুষ কে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ করে ফেলে,তাই চেষ্টা করবেন বর্তমানে যে কাজ করছেন সেটাতে মনোযোগ সহকারে কাজ করা।পিছনে কি ফেলে এসেছেন সেগুলো নিয়ে চিন্তা না করা।
- মানুষের সাথে সঙ্গ দেওয়া: একজন মানুষ যখন একা একা থাকে তখন সে বিভিন্ন রকমের চিন্তাভাবনা করতে থাকে। সে সময় মানসিক বিপর্যয় দিকে চলে যায়। তাই একা একা না থেকে একজন ভালো মানুষের সাথে সময় কাটাতে পারেন। যে আপনাকে আনন্দ দিবে ও মানসিকভাবে আপনার ভালো থাকবে।
- মাফ করতে শিখুন: মনের মধ্যে চাপা কষ্ট দীর্ঘদিন ধরে রাখলে সেটা মানসিক সমস্যায় পড়তে পারেন। সবাইকে মাফ করে দেওয়ার চেষ্টা করুন। কেউ আপনাকে কষ্ট দিয়েছে কি করবেন কিছুতো করার থাকেনা মানুষ তো স্বার্থপরের মতই কাজ করে। তাই আপনাকে মাফ করে দেওয়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। এতে আপনি মানসিক ভাবে ভালো থাকবেন।
- মানসিক চাপে কমানোর চেষ্টা করুন: আমাদের জীবনে কোনো না কোনো কারণে শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা মধ্যে পরি তা আমাদের জীবনকে দুর্বিসহ করে তোলে। তাই যতদূর চেষ্টা করা যায় মানুষের চাপ কমানোর।
- মাদক থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন: মাদক আমাদের শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকারক। আমরা যখন কষ্টে থাকি কিংবা কোন কিছু থেকে আঘাত পায় তখন আমরা মাদক সেবন করে একটু ভালো থাকার চেষ্টা করি কিন্তু এই সময়টাই মাদক আমাদের উপকারের থেকে আমাদের ক্ষতিটাই বেশি করে থাকে। আমরা বুঝতে পারি না এটা আমাদের মানসিক প্রেসার আরো বাড়িয়ে তোলে। তাই মাদক থেকে দূরে থাকা ভালো।
- ধর্মীয় কাজে মনোনিবেশ করা: অনেক সময় আমরা বিভিন্ন কারণে মানসিক চাপে ভুগি। এই মানুষের বিপর্যস্ত তা থেকে বাঁচতে এবং মনকে ভালো রাখতে ধর্মীয় কাজে মনোনিবেশ করা আরেকটি ভালো উপায়। যা আমাদের মানসিক প্রশান্তি দিতে সাহায্য করবে।
- পর্নোগ্রাফি দেখা বাদ দেন: পর্নোগ্রাফি আমাদের মন মানসিকতা ও শারীরিক দিকে বিপর্যস্ত করে থাকে। এই বদ অভ্যাস যদি কারো থেকে থাকে সেটা বাদ দেওয়া উচিত মানসিকভাবে ভালো থাকার জন্য।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের ১০টি উপায়
- মেডিটেশন করা:মানুষ অনেক সময় দূর চিন্তা গোস্ত থাকেন। আর এই দুশ্চিন্তা দূর করার আরো একটি ভালো উপায় হলো মেডিটেশন করা বা ব্যায়াম করা। এতে আপনার শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকবে।
- ছবি আঁকা: থাকেন আপনি কি করবেন বুঝতে পারছেন না তখন আপনি ছবি আঁকাতে পারেন। এক হাজারের মধ্যে যখন আপনি আপনাকে ধরে রাখতে পারবেন তখন কষ্টটা কিছু লাভ হবে।
- ডায়েরি লেখা: আপনি যখন কষ্টে থাকেন তখন ডাইরি লেখা একটি আপনার খুব ভালো উপায় হতে পারে। আপনার কষ্টের কথা কাউকে বলতে পারছেন না কিংবা আপনার ভালো লাগার কথা কিছু মানুষকে বলতে পারেন না। এমন অবস্থায় আপনি আপনার কথাগুলো ডায়েরিতে লিখতে পারেন। এই ডায়েরী লেখা আপনার মানসিক চাপ কমাতেও সাহায্য করে।
- আপনার যে কাজগুলো ভালো লাগে সেগুলো করা: আপনার যে কাজগুলো নিয়ে এতই ভালো লাগে সে কাজগুলো করার চেষ্টা করুন যেন বাহিরের কোন চিন্তা না সে আপনার ভিতরে।
- ভ্রমণ করা: যখন আপনার খুব খারাপ লাগে তখন চুপচাপ নিজেকে গুটিয়ে না রেখে বা বন্দী না রেখে। বাইরে ভ্রমণ করতে পারেন তা আপনার মানুষের চাপ নিয়ন্ত্রণে ভালো উপায়।
- বই পড়া: বই পড়া একটি খুব ভালো অভ্যাস। বই পড়ার মাধ্যমে আপনি নতুন কোন কিছু পথ উন্মোচিত করতে পারেন। বই পড়ার জন্য দেখা যাচ্ছে আপনার খারাপ কোন চিন্তা বা দুশ্চিন্তা বেশি হওয়ার চান্স থাকে না।
- আপনার পছন্দের খাবার রান্না করা: যখন আপনার খুব খারাপ লাগে তখন আপনি আপনার পছন্দের খাবার নিজের মতো করে রান্না করার চেষ্টা করুন। দেখবেন আপনার অনেকটা ভালো লাগছে। সে সময় দুশ্চিন্তা করার সময় থাকে না।
- বাগান করা: শারীরিক ও মানসিক ভাবে উপকারে আসে এই বাগান করা কাজের মাধ্যমে। যখন আপনি খুব স্টেজে থাকেন। কিম্বা খুব দূর চিন্তা করতে থাকেন কিছু ভালো লাগে না। সে সময় আপনি বাগান করতে পারেন। দেখবেন কাজের জন্য আপনার শারীরিক দিক দিয়েও ভালো লাগছে আবার মানসিক দিক দিয়েও ভালো লাগছে।
- ধর্মীয় কাজে মনোনিবেশ করা: দুশ্চিন্তাস্থ থাকার সময় অনেকের মন মানসিকতা পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। দুশ্চিন্তা না করে আপনি ধর্মীয় কাজে মনোনিবেশ করতে পারেন। যা আপনাকে মানসিকভাবে প্রশান্তি দিবে। আপনি আপনার সৃষ্টিকর্তার কাছে আপনার কষ্টের কথাগুলো ব্যক্ত করতে পারেন। দেখবেন মানসিকভাবেও আপনার খুব ভালো লাগবে।
- স্থির থাকতে চেষ্টা করুন: মানসিকভাবে স্থির থাকার চেষ্টা করুন দেখবেন অনেকাংশেই আপনি মুক্তি পাবেন।
- নীতিবাচক চিন্তা এড়িয়ে চলুন: খারাপ চিন্তাগুলো যতদূর সম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। ভালো কিছু চিন্তা করার আপনার মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
লেখকের মতামত
প্রিয় পাঠক আজকে আপনাদের মানসিক রোগ থেকে মুক্তির কিছু সহজ উপায় জানানোর চেষ্টা করেছি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে পোস্টটি শেয়ার করে দেওয়ার অনুরোধ রইলো।
টুকিটাকিরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url