গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না
গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না এ বিষয়টি নিয়ে আজকে আমরা জানাতে চলেছি। গর্ভাবস্থা একটি মেয়ের বিশেষ শারীরিক পরিবর্তন এই সময় যেমন পুষ্টির প্রয়োজন হয় তেমনই প্রয়োজন হয় মানসিক স্বস্তির।
অনেক গর্ভবতী মা আছেন যারা খুব উদ্বিগ্ন থাকেন কোন ফল খেলে অনাগত শিশু শারীরিক ও মানসিকভাবে বিকশিত হবে এবং কোন ফল খেলে গর্ভপাত হওয়ার ঝুঁকি থাকে থাকে। গর্ভবতী মায়েদের সুস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে আজকে আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইল।
ভূমিকা
গর্ভাবস্থা হল একজন মহিলার জীবনের ব্যাপক শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের পর্যায়। একজন গর্ভবতী মা তার ক্রমবর্ধমান শিশুর চাহিদা পূরণের জন্য সর্বোত্তম পুষ্টি প্রদানের চেষ্টা করে। স্বাস্থ্যকর খাদ্যের মধ্যে ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবার থাকা একান্ত প্রয়োজন। এই সময় ফলমূলকে স্বাস্থ্যকর খাদ্যের একটি অপরিহার্য অংশ হিসাবে বিবেচিত করা হয়।
আরো পড়ুন: গর্ভাবস্থায় পান্তা ভাত খেলে কি হয়
তবে গর্ভবতী মায়েদের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কোন ফলগুলি এড়ানো উচিত সে সম্পর্কে উদ্বেগ থাকেন। মা এবং শিশু উভয়ের মঙ্গল এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কী ফল খাওয়া উচিত সে সম্পর্কে জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না
একজন মহিলার জীবনে গর্ভাবস্থা একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সময়। মা এবং বিকাশমান শিশু উভয়ের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহে কোন ফল গুলো গুরুত্বপূর্ণ তা জানা প্রয়োজন। ঠিক তেমনি যে সমস্ত ফল গর্ভাবস্থায় খাওয়ার জন্য উপযুক্ত নয় সেই ফলগুলি অন্বেষণ করা এবং গর্ভাবস্থায় পরিমিতভাবে খাওয়া বা এড়িয়ে খাওয়া উচিত।
পেঁপে
পেঁপে খাওয়া থেকে গর্ভবতী মহিলাদের এড়িয়ে চলা উচিত। এর কারণ হল, পাকা বা আধা-পাকা পেঁপেতে ল্যাটেক্স থাকে, যা জরায়ুতে সংকোচনকে উদ্দীপিত করে। যা গর্ভবতী মহিলাকে জটিলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেঁপে খাওয়া সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়।
আনারস
আনারস হল আরেকটি ফল যা সাধারণত গর্ভাবস্থায় পরিমিতভাবে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। আনারসে ব্রোমেলেন নামক একটি এনজাইম থাকে, যা জরায়ুকে নরম করে এবং সংকোচন ঘটাতে পারে। আনারস অতিরিক্ত পরিমাণে সেবন করলে গর্ভপাত বা অকাল প্রসবের ঝুঁকি হতে পারে। কাঁচা আনারস খাওয়াকে নিরাপদ বলে মনে করা হলেও, গর্ভাবস্থায় আনারস অন্তর্ভুক্ত খাওয়ার আগে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা ভাল।
আঙ্গুর
গর্ভবতী মহিলাদের আঙ্গুর খাওয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। আঙ্গুরে রেভেরাট্রল নামক একটি যৌগ রয়েছে বলে জানা যায়। যা গর্ভবতী প্রাণীদের বিষাক্ততার তৈরি করতে পারে বলে মনে করা হয়। এটি প্রমাণিত যে মাঝে মাঝে অল্প পরিমাণে খেলে বড় ঝুঁকি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
আরো পড়ুন: গর্ভের বাচ্চার ওজন বৃদ্ধির খাবার
আবার অনেক সময় আঙ্গুরে উচ্চ মাত্রার কীটনাশক এবং রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। তাই গর্ভাবস্থায় ঝুঁকি কমাতে আঙ্গুর খাওয়ার ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। প্রয়োজনে ভালোভাবে আঙ্গুর ধুয়ে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। তবে বিশেষ করে বীজহীন জাতের আঙ্গুর, গর্ভাবস্থায় খাওয়া নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর। কিন্তু গবেষণায় এর পরিমাণ অনেক সীমিত পরিমাণে পাওয়া যায়।
সাইট্রাস ফল
কমলালেবু, লেবু, জাম্বুরা এবং অন্যান্য সাইট্রাস ফল ভিটামিন সি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির চমৎকার উৎস। কিছু মহিলার গর্ভাবস্থায় এই ফলের কারণে অম্বল বা অ্যাসিড রিফ্লাক্স দেখা দিতে পারে। এমন ধরনের শারীরিক অস্বস্তি দেখা দেয় তবে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন।
তরমুজ
তরমুজ একটি সতেজ এবং হাইড্রেটিং ফল। এটি সাধারণত গর্ভাবস্থায় সেবনের জন্য নিরাপদ বলে মনে করা হয়। যাইহোক, প্রাকৃতিক চিনির উপাদানের কারণে তরমুজের অত্যধিক ব্যবহার রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। তাই পরিমিত পরিমাণে তরমুজ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
তেঁতুল
গর্ভবতী মহিলারা তেতুল বেশি পরিমাণে খেলে প্রোজেস্টেরন হরমোন উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে। ফলে গর্ভপাতের মত সমস্যার তৈরি করতে পারে। গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসে তেঁতুল খাওয়ার ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করাই ভালো ।
ভিটামিন-এ যুক্তফল
ভিটামিন-এ যুক্তফল গর্ভাবস্থায় সতর্কতার সাথে খাওয়া উচিত। যে সমস্ত ফলগুলিতে ভিটামিন-এ বেশি পরিমাণে থাকে যেমন আম, কলা, পেঁপে, পেয়ারা। ভিটামিন-এ এর অত্যধিক গ্রহণ সম্ভাব্য জন্মগত ত্রুটির কারণ বলে মনে করা হয়। দৈনিক একজন গর্ভাবস্থায় প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের জন্য ৭৭০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন-এ এর বেশি না খাওয়া উচিত। ব্যক্তিগত চাহিদার উপর ভিত্তিতে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এ ধরনের ফল খাওয়া উচিত।
খেজুর
খেজুর হল সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ফল। গর্ভবতী মহিলাদের খেজুর খাওয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। ফলগুলি শরীরে উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাব রয়েছে ফলে গর্ভবতী মহিলার শরীরের তাপমাত্রায় ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে। তাই গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত।
হিমায়িত ফল
সমস্ত ফল দীর্ঘদিন হিমায়িত রাখা হয়। ফরমালিন, প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করা হয় এ সমস্ত ফল গর্ভাবস্থায় খাওয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো। এতে মা ও অনাগত শিশুর সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় কি সবজি খাওয়া যাবে না
গর্ভাবস্থা একজন মহিলার জীবনের পরিবর্তনশীল সময়। এই সময় মা এবং বিকাশমান শিশু উভয়ের স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি স্বাস্থ্যকর এবং সুষম খাদ্য গর্ভাবস্থা এবং ভ্রূণের যথাযথ বৃদ্ধি ও বিকাশ নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে কিছু কিছু শাকসবজি রয়েছে যা স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে এড়িয়ে যাওয়া উচিত। গর্ভাবস্থায় কি সবজি খাওয়া যাবে না সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করব।
কীটনাশক বা রাসায়নিক দ্বারা দূষিত সবজি: গর্ভবতী মহিলাদের কীটনাশক বা রাসায়নিক দ্বারা দূষিত সবজি খাওয়া এড়ানো উচিত। কীটনাশক বিকাশমান শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে এবং তাদের স্বাস্থ্যের উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। রান্নার পূর্বে সবজি ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
করলা : করলাতে থাকা গ্লাইকোলাইসিস, সেপনিক, মারোডিসিন যৌগ যা জরায়ু সংকোচনের কারণ হতে পারে। যার ফলে গর্ভাবস্থায় থাকা ভ্রূণের ক্ষতি হতে পারে। পরিমিত পরিমানে রান্না করে খাওয়া নিরাপদ বলে মনে করা হয়।
মাশরুম: মাশরুম ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টর একটি উৎস। কাঁচা বা কম রান্না করা মাশরুমে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া এবং পরজীবীকেও থাকতে পারে। লিস্টিরিয়া বা টক্সোপ্লাজমার মতো এই অণুজীবগুলি বিকাশমান ভ্রূণের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।
পালং শাক: গর্ভবতী মহিলাদের যেমন কেল, পালং শাক এবং সুইস চার্ডের মতো সবজি বেশি খাওয়া থেকে এড়িয়ে চলা উচিত। এই সবজিতে উচ্চ মাত্রার অক্সালিক অ্যাসিড থাকে। যা বেশি পরিমাণে খেলে ক্যালসিয়াম শোষণ করতে সমস্যা তৈরি করে এবং ক্যালসিয়াম অক্সালেট কিডনিতে পাথর তৈরি করতে পারে। গর্ভাবস্থায় এটি অল্প পরিমাণে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
পেঁপে : পেঁপেতে ল্যাটেক্স নামক উপাদান থাকে যা গর্ভবতী মহিলার গর্ভপাত ঘটাতে পারে বলে মনে করা হয়।
সজিনা : যদিও সজিনা স্বাস্থ্য ও পুষ্টিকর সবজি হওয়া সত্ত্বেও এতে থাকে আলফা সিটেস্টেরল যা গর্ভবতী মহিলার গর্ভপাতের মত সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
অ্যালোভেরা: অ্যালোভেরা একটি প্রকৃতির উপাদান এটি গর্ভাবস্থায় না খাওয়ার সাথে সম্পর্কিত কোন নিয়মাবলী বা নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে অনেকের ব্যক্তিগত মতামত এটি খেলে গর্ভাবস্থায় সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় সাবধানতার সাথে খাওয়ার ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়া হয়।
বাঁধাকপি, ব্রোকলি এবং ফুলকপি: এই সবজিতে গয়ট্রোজেন নামক পদার্থ থাকে, যা অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া হলে থাইরয়েড হরমোনের উপর প্রভাব পড়তে পারে। ফলে গর্ভবতী মহিলা ও ভ্রুণ উভয়ের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
অত্যধিক ভিটামিন এ: ভিটামিন-এ এর উচ্চ মাত্রা বিকাশমান ভ্রূণের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। যদিও ভিটামিন-এ ভ্রূণের বিকাশের জন্য অপরিহার্য। মিষ্টি আলু, গাজর এবং পালং শাক এর মতো উচ্চ-ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাবার সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত বলে মনে করা হয়।
এলার্জি যুক্ত সবজি: এলার্জি যুক্ত সবজি যেমন বেগুন, কচু। এ সমস্ত সবজি গর্ভাবস্থায় এড়িয়ে চলা উচিত।
FAQ
ফলিক এসিড ট্যাবলেট কত দিন খেতে হয়?
সন্তান নিতে চাওয়া থেকে শুরু করে বাচ্চা জন্মের তিন মাস পর্যন্ত প্রতিদিন ৪০০ মাইক্রো মিলিগ্রাম ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ করা উচিত
গর্ভাবস্থায় বেশি ফল খাওয়া কি ক্ষতিকর?
গর্ভাবস্থায় বেশি মিষ্টিযুক্ত ফল এবং টক জাতীয় ফল পরিমিত পরিমাণে খাওয়াই ভালো। মিষ্টি জাতীয় ফলগুলোতে প্রাকৃতিক চিনির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে যা গর্ভবতী মহিলাদের রক্তের শর্করা পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে। যা মা ও অনাগত শিশু দুজনের ক্ষতিকর হতে পারে। অপরদিকে টক জাতীয় ফল খেলে পেটে এসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে কিছু মহিলার গর্ভাবস্থায় এই ফলের কারণে অম্বল বা অ্যাসিড রিফ্লাক্স দেখা দিতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় পরিমিত পরিমাণে ফল খাওয়াই ভালো।
মস্তিষ্কের বিকাশে কোন ভিটামিন ভালো?
কিছু যৌগ নিউট্রিয়নস এরমধ্যে সজিংক, ফলিক অ্যাসিড, কপার এবং ভিটামিন এরমধ্যে ভিটামিন-এ ভিটামিন-ডি ভিটামিন-কে ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স মস্তিষ্কের বিকাশে জন্য ভালো।
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য কোনটি ভালো?
স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য ফ্যাটি অ্যাসিড, ওমেগা-3, এসিটাইল-এল-কারনিটাইন, জিঙ্কগো বিলোবা এবং ভিটামিন-বি12 খুব ভালো।
শিশুর ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট খাবার
বুকের দুধ, ডিম, চর্বিযুক্ত মাছ, অল্মন্ড ও বাদাম,দানাদার শস্য, ডাল জাতীয় শস্য, বিভিন্ন রঙের ফল, সবুজ শাকসবজি, দুধ ও দুধ জাতীয় পণ্য
লেখকের মতামত
গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া যাবে না এই সতর্কতাগুলি সম্পর্কে আমরা সচেতন হই। এই পোস্টের মাধ্যমে আমরা বোঝানোর চেষ্টা করেছি গর্ভবতী মেয়েদের কোন ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। একটি স্বাস্থ্যকর গর্ভাবস্থা এবং একটি সমৃদ্ধ শিশুর উন্নতির বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে আমাদের এই পোস্টটি সাহায্য করবে বলে আমরা আশা করি।
টুকিটাকিরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url