কফি দিয়ে রূপচর্চা-তৈলাক্ত ত্বকের ব্রণের দাগ দূর করার উপায়
কফি দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় ও কফি দিয়ে রূপচর্চা করতে চান অনেকেই আজকে তাদের জন্যই আমার এই পোস্টটি। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক কিভাবে কফি ব্যবহার করলে খুব তাড়াতাড়ি ত্বক ফর্সা হয়।
কফি খাওয়ার উপকারিতা ও ব্রণ দূর করতে কফি ব্যবহার কিভাবে করা যায়। তা হয়তোবা অনেকেই জানেন না। জানার জন্য অনেক ওয়েবসাইট ঘাটাঘাটি করেন। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক।
ভূমিকা
দিনের বেলায় আমরা কাজের জন্য বাইরে থাকি এ সময় আমাদের ত্বকে অনেক ধুলাবালি জমে যায়। এই ধুলাবালি জমে ত্বকে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস কিংবা ছত্রাক সংক্রমণ ঘটতে পারে। এই সবগুলো কথা মাথায় রেখে আমরা প্রাকৃতিকভাবে এগুলো প্রতিহত করতে পারি। কফি পাউডার আমাদের হাতের কাছেই থাকে।
এই কপি পাউডার দিয়ে আমরা আমারদের ত্বকের যত্ন নিতে পারি। কফিতে রয়েছে এমন সব উপাদান যা আমাদের ত্বককে পরিষ্কার করতে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে।
কফি দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
- কফি মুখের ক্লিনজার হিসেবে ব্যবহার করা হয়: আমরা বাজার থেকে বিভিন্ন ধরনের ত্বক পরিষ্কার রাখার জন্য ক্লিনজার কিনে থাকি। এগুলো থেকে সবচেয়ে ভালো হয় কফি কে ক্লিনজার হিসেবে ব্যবহার করে ত্বক পরিষ্কার করা। এক চা চামচ কফি ও এক চা চামচ দুধ একত্রে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন। এরপরে আপনি আপনার মুখমণ্ডলে, ঘাড়ে ও গলায় ব্যবহার করতে পারেন। কিছুক্ষণ রাখার পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। এতে আপনার ত্বক খুব ভালোমতো পরিষ্কার হয়ে যাবে এবং ত্বক আরো বেশি উজ্জ্বল দেখাবে।
- কফি মুখের স্কাব হিসেবে ব্যবহার করা হয়: কবে আপনার ত্বকে প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করবে। ত্বকের স্কাব হিসেবে আপনি কফি ব্যবহার করতে পারেন। এক টেবিল চামচ চিনি ও এক টেবিল চামচ কফি একত্রে ভালো মতো মিশিয়ে নিন এরপরে আপনার ত্বক ভালো মতো ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। এরপরে এই পেস্টটি মুখমন্ডলে ব্যবহার করুন কিছুক্ষণ মেসেজ করার পরে। ঠান্ডা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে পারেন বা কাপড় দিয়ে মুছে নিতে পারেন। আপনার ত্বককে পার্থক্যটা নিজেই বুঝতে পারবেন।
- কফি মুখে মাক্স হিসেবে ব্যবহার করা হয়: আমরা আমাদের ত্বকের জন্য কফির মাক্স হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। এক চা চামচ কফি, এক চা চামচ গোলাপজল ও এক চা চামচ বেসন একত্রে ভালোমতো মিশিয়ে। একটি পেস্ট তৈরি করুন। এরপরে এই পেজটি মুখমন্ডল ও গলায় ঘাড়ে লাগিয়ে রাখুন। ১০-১৫ মিনিট রাখার পরে। হালকা শুকিয়ে আসলে ঠান্ডা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। এতে আপনার ত্বকে উজ্জ্বল আভা তৈরি করবে।
- কফি বডি স্কার্ভ হিসেবে ব্যবহার করা হয়: কফি পাউডার আপনার ত্বকের বডি স্কার্ট হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। গোসলের আগে এক চা চামচ কফি পাউডার ও এক চা চামচ নারকেলের তেল একত্রে মিশিয়ে আপনার ঘাড়ে,গলায়,হাঁটু ও কুনুই হালকাভাবে স্কার্ভ করতে পারেন। এতে আপনার ত্বকের কালচে ভাব দূর হবে। এবং ত্বককে আরো বেশি উজ্জ্বল করতে সাহায্য করবে।
- ডার্ক সার্কেল দূর করতে ব্যবহার করা হয়: ত্বকের ডার্ক সার্কেল দূর করতে কফি দারুন কাজ করে থাকে। কফি পাউডার এলোভেরা জেল ও নারিকেলের তেল একত্রে মিশিয়ে আমরা ত্বকে ব্যবহার করতে পারি। যা আমাদের ত্বকের ডার্ক সার্কেল, চোখের নিচের কালি ভাব দূর করতে সাহায্য করবে।
- ঠোঁটে স্কাব হিসেবে কফি ব্যবহার করা হয়: কবে ব্যবহার করে আমরা আমাদের ঠোঁটের কালো ভাব দূর করতে পারি। কফি ও মধু একত্রে মিশিয়ে আমরা আমাদের ঠোঁটে ব্যবহার করতে পারি। এবং কিছুক্ষণ ঠোটের উপরে মেসেজ করতে পারি। যা আমাদের ঠোঁটের উপরের মৃত কোষ গুলো দূর করতে সাহায্য করবে। মধু থাকার কারণে ঠোঁটের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করতে ও উজ্জ্বল করতে সাহায্য করবে।
- বয়সের ছাপ কমাতে কফি ব্যবহার করা হয়: আমাদের মধ্যে বয়স একটু বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের উপর ছাপ করতে থাকে।বয়সের ছাপ কমাতে আমরা কপি পাউডার ব্যবহার করতে পারি। এক চা চামচ কাঁচা দুধ, এক চা চামচ কফি পাউডার, এক চা চামচ এলোভেরা জেল একত্রে ভালো মতো মিশিয়ে নিয়ে আমাদের ত্বকে যেমন মুখমন্ডলে, ঘাড়ে, গলায়, পায়ে, ও হাতে ব্যবহার করতে পারি। ১০ থেকে ১৫ মিনিট রাখার পরে সেটা ভালোমতো পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ত্বকে ভালো ফলাফল পেতে আমরা এটা নিয়মিত একবার ব্যবহার করতে পারি।
- কফি ব্যবহার করা হয় রোদে পোড়া দাগ দূর করতে : ত্বকের রোদে পোড়া ভাব কমাতে সাহায্য করে কফি। এই রোদে পড়া দাগ কমাতে আমাদের কিছু করণীয় আছে। এক টেবিল চামচ কফি নিয়ে তার সঙ্গে এক টেবিল চামচ লেবুর রস একত্রে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করতে পারি। এরপরে ভা6লোভাবে মুখমন্ডলে ব্যবহার করতে পারি। ১৫থেকে ২০ মিনিট রাখার পরে নরমাল পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আপনার ত্বক অনেকটা সতেজ হয়ে যাবে সাথে সাথে।
কফি দিয়ে রূপচর্চা
এক্সফোলিয়েশন: ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে এবং মসৃণ, উজ্জ্বল ত্বক প্রকাশ করতে প্রাকৃতিক এক্সফোলিয়েন্ট হিসেবে কফি ব্যবহার করা যেতে পারে। একটি স্ক্রাব তৈরি করতে একটু জল বা নারকেল তেলের সাথে কফি পাউডার মিশ্রিত করুন। বৃত্তাকার গতিতে ত্বকে আলতোভাবে ম্যাসাজ করুন। এর পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলুন। এটি আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
আরো পড়ুন:টমেটো দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায়
চোখের নিচে কালো ভাব ও ফোলা ভাব কমা তে সাহায্য করে: কফিতে থাকা ক্যাফেইনের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা চোখের নিচে ফোলাভাব এবং কালো দাগ কমাতে সাহায্য করে।
চুলের যত্নে: কফি চুল চকচকে করতে সাহায্য করে এবং প্রাকৃতিক ভাবে চুলের রঙ বাড়াতে তুলতে সাহায্য করে। কপি পাউডার ও পানি একত্রে মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করতে পারেন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট চুলে রেখে দিন এরপরে ঠান্ডা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলুন
আরো পড়ুন: চিরতরে ব্রণ থেকে মুক্তির উপায়
পায়ের যত্নে কফির ব্যবহার: কফিতে আমরা প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পেয়ে থাকি যা রুক্ষতা কমাতে সাহায্য করে। গোসলের পরে নারকেলের তেলো কফি পাউডার একত্রে মিশিয়ে পায়ের গোড়ালিতে ব্যবহার করতে পারেন।
ফেস মাস্ক হিসেবে কফি পাউডার: একটি পুষ্টিকর ফেস মাস্ক তৈরি করতে দুধ, মধু বা অ্যালোভেরা সাথে কফি গুড়া একত্রিত মিশিয়ে নিন। এরপরে আপনি আপনার ত্বকের ব্যবহার করতে পারেন।কফির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য ত্বককে উজ্জ্বল ও পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে।
কফি খাওয়ার উপকারিতা
কফি আমরা কম বেশি সকলে পছন্দ করি। অনেক সময় আমরা ক্লান্তি দূর করার জন্য কফি পান করে থাকি। কফি চেরি নামক এক ধরনের ফলের বীজ হলো কফি বীজ। কফি পান করলে আমরা বিভিন্ন ধরনের উপকার পেয়ে থাকি তা নিম্নে বর্ণনা করা হলো:
- কফি আমাদের শরীরে মেদ কমাতে সাহায্য করে।
- কফি আমাদের শরীরের শক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে থাকে।
- বিপাক ক্রিয়া সাহায্য করে কফি।
- শরীরের অতিরিক্ত ক্যালরি ঝরাতে সাহায্য করে।
- ব্ল্যাক কফি আমাদের শরীরকে সারাদিন সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে।
- কফি থেকে আমরা প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পেয়ে থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও কফি সাহায্য করে থাকে।
- নিয়মিত কবে করলে বিভিন্ন ধরনের অসুখ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। যেমন লিভারের সমস্যা ,ডিপ্রেশন, ক্যান্সারের মতো সমস্যা ।
- কফি উদ্বিগ্নতা দূর করতে এবং কাজে মননিবেশ করাতে সাহায্য করে।
ব্রণ দূর করতে কফি
ব্রণে এর জন্য
কফি আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী তেমন রূপচর্চার জন্য এর উপাদানটি অনেক উপকারী। কফি ব্যবহার করে আমরা ব্রণের মত সমস্যা থেকে দূরে থাকতে পারি। এক চা চামচ মধু , এক চা চামচ বেসন, এলোভেরা জেল ও কফি পাউডার একত্রে মিশিয়ে সপ্তাহে তিন চার দিন ব্যবহার করতে পারি। এই উপাদানটি ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে থাকে।
আরো পড়ুন : অল্প বয়সে চুল পড়ার কারণ গুলো জেনে নিন
মুখের কালো দাগ দূর করার জন্য
মুখের কালো দাগ দূর করার জন্য আমরা কফি পাউডার এর সঙ্গে লেবুর রস ও মধু একত্রে মিশিয়ে ত্বকে মেসেজ করতে পারি। এতে আমাদের ত্বকের উপরে ভাগে কালো ভাব দূর করবে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
ত্বকের শুষ্কতার জন্য
তোকে শুষ্কতার জন্য আমরা কফি পাউডারের সঙ্গে অলিভ অয়েল তেল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারে। এতে আমাদের ত্বকে শুষ্কতা দূর করতে সাহায্য করবে।
তৈলাক্ত ত্বকের ব্রণের দাগ দূর করার উপায়
- ডিম এর সাদা অংশ, শসা ও পুদিনা পাতা একত্রে ভালোমতো ব্লেন্ড করে নিয়ে আপনি আপনার ত্বকে ব্যবহার করতে পারেন। এটি আপনার ত্বকে টানটান রাখতে সাহায্য করবে। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। পুদিনা পাতায় রয়েছে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য যা আপনার ত্বকের ব্রণের সমস্যা দূর করবে। শসা আপনার ত্বককে পরিষ্কার রাখবে।
- কমলার খোসা, কাঁচা দুধ, ও হলুদ একত্রে ব্লেন্ড করে নিয়ে ভালো মতো একটি পেস্ট তৈরি করে নিন। এরপর এটি ত্বকে এপ্লাই করুন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে আপনার তৈলাক্ত ত্বকের তেলতেলে ভাব দূর করতে সাহায্য করবে এবং ত্বক উজ্জ্বল করতেও সাহায্য করবে।
- কলা ব্যবহার করেও আপনি আপনার ত্বকের তেলতেলে ভাব দূর করতে পারেন।
- লেবুর রস আমরা প্রাকৃতিকভাবে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পেয়ে থাকি যা ত্বকের ব্রণ ফুসকুড়ি বা তৈলাক্ত ভাব দূর করতে সাহায্য করে।
লেখক এর মতামত
প্রিয় পাঠক, কফি দিয়ে ফর্সা হওয়ার উপায় গুলো কি এবং তৈলাক্ত ত্বকের ব্রণের দাগ দূর করার উপায় গুলো আপনাদের জানানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। আপনাদের যদি ভালো লেগে থাকে এই পোস্টটি পড়ে। তাহলে অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে দেওয়ার অনুরোধ রইলো।
টুকিটাকিরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url