জামের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা -জাম গাছের ছালের উপকারিতা

জামের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা ও জাম গাছের ছালের উপকারিতা সম্বন্ধে আমাদের মধ্যে অনেকেই জানেন না।এই বিচির কত উপকারিতা। যারাই বিষয়ে জানেন না এবং জানতে আগ্রহী তাদের জন্যই আজকে আমার এই পোস্টটি। 
কালো জামের বিচির উপকারিতা, জাম গাছের পাতার উপকারিতা, জাম বীজ চূর্ণ খাওয়ার নিয়ম অনেকেই জানেন না কিভাবে খেতে হবে। কিভাবে সেটা প্রসেসিং করা লাগবে। চলুন তাহলে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

ভূমিকা

জাম আমাদের খুব পরিচিত একটি ফল যা গ্রীষ্মকালে পাওয়া যায়। যেমন খেতে মিষ্টি তেমন সুস্বাদু। এই জাম যেমন সুস্বাদু তেমন তার বিচিরও গুনাগুন অনেক। জাম গাছের পাতাতেও রয়েছে অনেক উপকারিতা। আসুন তাহলে আমরা কিভাবে খেতে হবে। কিভাবে বা সেগুলো সংরক্ষণ করতে হবে। এই সকল বিষয়গুলো নিচের পয়েন্ট গুলো মনোযোগ সহকারে পড়লে জানতে পারবেন।

জামের বিচির উপকারিতা ও অপকারিতা

বিভিন্ন ধরনের রোগের ক্ষেত্রে জামের বিচির ব্যবহার করা হয় তা খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। কারণ জামের ভিত্তিতে রয়েছে অনেক উপকারিতা।
জামের বিচির উপকারিতা গুলো জেনে নেওয়া যাক:
  • জামের বিচি রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
  • আমাদের শরীরে রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে থাকে।
  • জামের শুকনো বিচি পাউডার করে নিয়ে এবং এর সাথে আমের শুকনো বীজ গুঁড়ো করে নিয়ে একত্রে মিশিয়ে। সকালে ও রাত্রে নিয়মিত খেলে বীর্য কারো হয়।
  • যকৃতের সমস্যা দূর করতে এবং কার্যকরী ক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত জামের গুঁড়ো সেবন করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
  • আমাদের মধ্যে অনেকেরই খাবার হজমে সমস্যা দেখা দেয়। এমতাবস্থায় এই জামের বিচির গুড়া নিয়মিত খেলে হজমজনিত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
  • গ্রামের বীচে আমরা প্রচুর পরিমাণে আমিষ পেয়ে থাকে। শরীরের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এই গ্রামের বীজগুলো।
  • জামের বীজ মস্তিকের কার্যকরী ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • এই বীজ থেকে আমরা প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পেয়ে থাকি। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • জামের বীজ পুরুষদের পুরুষত্ব বাড়াতে সাহায্য করে।
জামের বীজ থেকে আমরা এই উপাদান গুলো পেয়ে থাকি
  • এসেন্সিয়াল অয়েল
  • টেনিনস
  • গ্লাইকোসাইড
  • জাম্বোনীল
  • ফিলোনিক
  • গেলিক
  • এলাজিক
  • ফিরুলিক
  • হ্যাক্সো হাইড্রোফেনিক এসিড
জামের বিচি খাওয়ার অপকারিতা গুলো নিম্নে বর্ণনা করা হলো:
  • জামের বিচি গুঁড়ো অনেকেরই এলার্জি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • এই গুঁড়ো বেশি পরিমাণে খাবার ফলে পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ার ফলে পেট ব্যথা বা পাতলা পায়খানা মত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
প্রতিটা জিনিসের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমন এর কিছু অপকারিতা ও রয়েছে। তাই আমাদের খাওয়ার সময় প্রত্যেকটা খাবারই বিবেচনা করে খাওয়া উচিত। যে খাবারের সমস্যা দেখা দেয় সে খাবার টা বাদ দিয়ে খাওয়ায় শ্রেয়।

জাম গাছের ছালের উপকারিতা

জাম গাছের ছালে অনেক উপকারিতা রয়েছে তা নিম্নে বর্ণনা করা হলো:
  • কেইমফেরন , বিটা-সাই ক্লোরেস্টোরাল উপাদান পাওয়া যায়।
  • জাম গাছের ছাল পানির ভেতর দিয়ে ভালোমতো সিদ্ধ করে নিয়ে সে পানিতে গড়গড়া করলে। দাঁতের সমস্যা দূর হয়। যেমন দাঁতের গোড়া ব্যথা,ফোলা,কিংবা দাঁত নাড়ার মত সমস্যা এগুলো থেকে সহজে সমাধান পাওয়া যায়।

কালো জামের বিচির উপকারিতা

জামে আমরা ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম ও লৌহ পেয়ে থাকে। তেমনি জামের বীজ থেকে আমরা বহুৎ রকম উপকার পেয়ে থাকি বা বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ ভিটামিন পেয়ে থাকি। 
  • এই বীজগুলো শরীরে রক্তের শর্করা মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে থাকে। 
  • জামের বীজ এর গুঁড়ো নিয়মিত খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। 
  • কালোজামের বীজে আমরা পলিফেনল পেয়ে থাকি যা আমাদের শরীরের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। 
  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে কালোজামের বীজ। 
  • কালোজামের বীজ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে
  • ক্লাভোনয়েড এবং ফেনোলিক  নামক এক ধরনের যৌগ রয়েছে যা আমাদের শরীরে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পায়ে যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এই কালোজামের বীজ।

জাম বীজ চূর্ণ খাওয়ার নিয়ম

আমরা বিভিন্ন উপকারের কারণে জামের বীজ খেয়ে থাকে। কিন্তু জামের বীজ যখন দোকান থেকে কিনে আনে তখন সেটা আসল কি নকল সেটা জানার মত কোন অবস্থা থাকে না। তাই আমরা অনেকেই গ্রামের বীজের জন্য নিজের বাসায় করতে চাই। চলুন আমরা তাহলে সেটা কিভাবে করা যাবে সে উপায়গুলো জেনে নেই। 


প্রথমে জাম সংগ্রহ করতে হবে। তারপরে জাম এর উপর থেকে উপর থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বীজগুলো ভালোমতো ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। তারপরে চার থেকে পাঁচ দিন ভালো মতো রোদ্রে শুকিয়ে নিতে হবে। এরপরে জামের বীজ এর উপরে যে শক্ত আবরণ থাকে সেটা ফেলে দিয়ে ভেতরের সবুজ অংশটুকু ভাল মতো শুকিয়ে নিতে হবে। 


এরপরে এই বীজগুলো ব্লেন্ডারে ভালোমতো গুড়ো করে নিতে হবে। তাহলে তৈরি হয়ে গেল আমাদের গ্রামের বীজ এর গুঁড়ো বা চূর্ণ। এগুলোগুলো শুকনো কাঁচের কৌটো তে আপনি সংরক্ষণ করতে পারেন বা বায়ুরোধী কোন বক্সে আপনি এটা সংরক্ষণ করে রেখে দিতে পারেন। এরমধ্যে একটুকু ভেজাল কোন কিছু থাকলো না। আপনি মনে তৃপ্তি সহকারে খেতে পারেন। কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকলো না।

জাম পাতার ব্যবহার

জাম পাতা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। নিম্নে জাম পাতার ব্যবহার গুলো বর্ণনা করা হলো:
  • চুল পড়ে যেতে থাকলে জাম পাতার রস খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
  • জাম পাতার রস মুখের ক্ষত সারাতেও অনেক কার্যকরী।
  • জামপাতা শুকিয়ে গুড়ো করে নিয়ে খেলে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
  • এই শুকনো গুড়া পাতা সজনে পাতার সঙ্গে মিশিয়ে নিয়মিত খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

জাম এর উপকারিতা

জাম এর উপকারিতা নিম্নে বর্ণনা করা হলো:
  • জাম থেকে আমরা প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম পেয়ে থাকি যা আমাদের হাটের জন্য অনেক উপকারী।
  • বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা আমাদের ফুসফুসি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। তখন এই জাম আমাদের ফুসফুসের ক্ষত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
  • জাম থেকে পাওয়া ফলিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • জাম থেকে আমরা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এবং বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি পেয়ে থাকে যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য কাজ করে।
  • আমাদের ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ করতে জাম দারুন কাজ করে।
  • জানে আমরা প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস পেয়ে থাকে যা আমাদের দাঁত ও মাড়ির জন্য অনেক উপকারী।
  • জাম থেকে আমরা প্রচুর পরিমাণে আয়রন পেয়ে থাকি। যা আমাদের শরীরের রক্তশূন্যতা কমাতে সাহায্য করে।
  • জামে আমরা প্রচুর পরিমাণে পলিফেনাল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পেয়ে থাকে যা আমাদের শরীরে ক্ষতিকর রেডিক্যাল থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে।

জাম গাছের পাতার উপকারিতা 

জাম গাছের পাতার উপকারিতা অনেক তা নিম্নে বর্ণনা করা হলো:
  • জাম গাছের কচি কচি যে পাতা থাকে সেই পাতার রসের সঙ্গে ছাগলের দুধ মিশিয়ে খেলে রক্ত আমাশয় ভালো হয়।
  • বমি বমি ভাব দূর করতে জাম পাতার রস অনেক ভালো কাজ করে। জাম পাতা পানিতে মিশিয়ে ভালোমতো সিদ্ধ করে নিয়ে সে রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে বমি বমি ভাব দূর হয়ে যায়।
  • জামের পাতা শুকনো ব্লেন্ডারে গুঁড়ো করে নিয়ে সেগুলো দিয়ে নিয়মিত দাঁত মাজলেও দাঁতের গোড়া মজবুত করতে সাহায্য করে।
  • অনেক সময় আমাদের হাত-পায়ে অনেক জায়গায় কেটে যায়। এমত অবস্থায় জামের কচি পাতা ধুয়ে পরিষ্কার করে নিয়ে সে পাতার রস কাটা জায়গায় লাগিয়ে রাখলে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়।

লেখকের মতামত

প্রিয় পাঠক, আজকে আমাদের পোস্টটি পড়ে যদি আপনার ভালো লেগে থাকে,কিংবা আপনার কোন উপকারে এসে থাকে। তাহলে অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে দেওয়ার অনুরোধ রইল। যেন আপনার বন্ধু কিংবা আপনার পরিচিত সকলেই এই বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত জানতে পারে এবং তাদের উপকারে এসে থাকে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

টুকিটাকিরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url