শুকনো কাশি থেকে মুক্তির উপায়-কাশি দূর করার উপায়

শুকনো কাশি থেকে মুক্তির উপায় ও কাশি দূর করার উপায় গুলো কি আপনার জানা আছে ? কাশি খুবই বিরক্তিকর একটি জিনিস। রাতের ঘুমটা হারাম হয়ে যায়। চলুন তাহলে আজকে জেনে নেওয়া যাক কাশি হলে আমাদের করণীয় কি।
সর্দি কাশি হলে কি ওষুধ খাওয়া উচিত,রাতে কাশি কমানোর উপায় ও খুসখুসে বিরক্তিকর কাশি দূর করার উপায় অথবা অতিরিক্ত কাশি হলে কি করতে হবে ? এই সকল বিষয়গুলো নিয়ে আজকে আপনাদের জানাতে চলেছি। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক।

ভূমিকা

কাশি, কাশি হলে কেমনটা হয় তা বুঝানোর মত কিছু নেই কারণ আমাদের মাঝেমধ্যেই ঠান্ডা কাশি হয়ে থাকে। কাশি হলে খুবই কষ্ট হয় যেমন ছোটদের তেমন বড়দের। রাতের ঘুমটা যেন হারাম হয়ে যায়। তখন মনে হয় কি করলে কাশি কমে বা একটু আরাম পাওয়া যায়। এমন কিছু উপায় আছে যেগুলো আমাদের ঘরেই থাকে সেই উপাদানগুলো। সেগুলো তো আমরা চেষ্টা করলে অনেকটা আরাম পেতে পারি।এগুলো তো কাজ না হলে আপনি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।

শুকনো কাশি থেকে মুক্তির উপায়

শীতের শুরুতে কিংবা শীতের শেষের দিকে আমরা এই সমস্যাটাই বেশি সম্মুখীন হই। খুশখুসে কাস, গলা ব্যথা ইত্যাদি। শুকনো কাশি থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু ঘরোয়া টোটকা নিম্ন বর্ণনা করা হলো:
  • গরম পানি: গরম পানি শুকনো কাশির জন্য অনেক উপকারী। সঙ্গে সঙ্গে কাশি কমাতে সাহায্য করে। গরম পানির সঙ্গে লবণ মিশিয়ে গড়গড়া করলে গলা ব্যথা ও খুসখুসে ভাব কমে যায়।
  • গোলমরিচ: গোলমরিচ গুঁড়ো করে চায়ের সঙ্গে মিশে খেলেও কাশির জন্য অনেক উপকার পাওয়া যায়।
  • লেবু: আমরা সবাই জানি লেবু হল একটি সাইট্রিক ফল যা থেকে আমরা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পেয়ে থাকি।পানির সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে খেলেও কাশির জন্য অনেক উপকার পাওয়া যায়।
  • মধু: মধু আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। মধুর থেকে আমরা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পেয়ে থাকে। যা আমাদের শরীরের জন্য উপকার। মধুতে আরো রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্যের কারণে কাশি কমাতে সাহায্য করে। আমাদের কাশি হলে, হালকা কুসুম গরম পানির সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারি। যা কাশি উপশম করতে সাহায্য করবে।
  • হলুদ: হলুদ থেকে আমরা কারকিউমিন নামক এক ধরনের উপাদান পেয়ে থাকে। যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। ইনফ্লামেটরি ও জীবাণু বিরোধী বৈশিষ্ট্য হিসেবে আমাদের শরীরে কাজ করে থাকে। যা আমাদের কাশির জন্য অনেক উপকারী। এক গ্লাস পানির সঙ্গে কিংবা দুধের সঙ্গে হালকা হলুদ মিশিয়ে আপনি নিয়মিত পান করতে পারেন।
  • আদা: আদা, যা আমাদের রান্নাঘরে সচরাচর সব সময় পাওয়া যায়। আদতে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য। যা কাশির জন্য অনেক উপকারী। আদার রস করে আমরা খেতে পারি কিংবা আদা কুচি কুচি করে কেটে গরম পানিতে ফুটিয়ে চা তৈরি করেও খেতে পারে। আদতে রয়েছে জীবাণু বিরোধী উপাদান যা কাশি কমাতে সাহায্য করে।
  • তুলসী পাতা: তুলসী পাতাতে আমরা ভিটামিন সি ও জিংক পেয়ে থাকি যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তুলসী পাতা প্রতিদিন চার-পাঁচটি চিবিয়ে খেলেও কাশির জন্য অনেক উপকারী। তাছাড়া তুলসী পাতার চা তৈরি করেও খাওয়া যায়। কিংবা তুলসী পাতার রস ও মধু একত্রে মিশিয়ে খেলেও কাশির জন্য অনেক উপকারী।
  • মসলা চা: আমাদের কাশি হলে গরম কিছু পান করলে সাময়িক আরাম পাওয়া যায় এর মধ্যে মসলা চা অন্যতম। মসলা চায়ের মধ্যে আমরা বিভিন্ন ধরনের মসলা ব্যবহার করে থাকি। যেমন লবঙ্গ ,এলাচ, দারুচিনি, তেজপাতা, গোলমরিচ, তুলসী পাতা, আদা ইত্যাদি যা প্রত্যেকটাই আমাদের কাশির জন্য অনেক উপকারী।
  • রসুন: রসুন এ রয়েছে এডিসিন নামক এক উপাদান যা জীবাণু ধ্বংস করতে সাহায্য করে। রসুন কুচি করে সালাদের সঙ্গে খেলেও কাশির জন্য অনেক উপকার পাবেন।
  • গরম পানির ভাব: আমরা আরও একটি কাজ করতে পারি সেটি হল গরম পানির ভাব নেওয়া। এ কাজটি করলে শ্বাসনালীতে স্লিমা নিঃসরণকে সাহায্য করে থাকে।

কাশি দূর করার উপায় 

আদা
আদাতে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্য যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। আদা ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিয়ে তার সঙ্গে লবণ নিয়ে চাবিয়ে রস খেতে পারি যা সঙ্গে সঙ্গে কাশি কমাতে সাহায্য করে।
লবঙ্গ
যখন প্রচুর পরিমাণে কাশি হয় তখন লবঙ্গ ভালোমতো পরিষ্কার করে নিয়ে তাদের নিচে রেখে চুষতে থাকলে সাথে সাথে খুসখুসে কাশি কমে যায়। লবঙ্গ যে রসটি থাকে তা আমাদের গলার ভিতরে গিয়ে এক ধরনের ঝাল ঝাল অনুভূত হয় যা কাশি কমাতে সাহায্য করে।


কাশির লজেন্স
কাশির জন্য এক ধরনের ক্যান্ডি পাওয়া যায় যা মুখে দিলে গলার ভিতরে ঠান্ডা অনুভূতি সৃষ্টি হয়। এ লজেন্স গুলো হালকা চুষতে থাকলে সাথে সাথে খুসখুসে কাশিটা কমে যায়। এবং গলার ভিতরে ঠান্ডা অনুভূত হয়।
তুলসির পাতা
আমাদের সকলেরই জানা তুলসী পাতা আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী। তুলসী পাতা তে আমরা ভিটামিন সি ও জিংক পেয়ে থাকি। যা আমাদের কাশি কমানোর জন্য অনেক উপকারী। তুলসী পাতা আমরা ভালোমতো পরিষ্কার করে নিয়ে সাথে সাথে চাবিয়ে খেতে পারে কিংবা চায়ের সঙ্গেও খেতে পারি আবার তুলসী পাতার রস বের করে নিয়ে তার সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেতে পারি। যা কাশির জন্য অনেক উপকারী।
মধু
মধু কাশি কমানোর জন্য খুব ভালো একটি উপাদান। মধুতে আমরা প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পেয়ে থাকি যা কাশি কমানোর জন্য খুবই কার্যকরী। কুসুম গরম পানির সঙ্গে মধু মিশিয়ে খাওয়া যায়। আবার কুসুম গরম পানি মধু ও গোলমরিচের গুঁড়ো একত্রে মিশিয়ে খেলে ও কাশির জন্য খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।


বাসকের পাতা
বাসকের পাতা একটু তেতো ভাব হলেও কাশির জন্য কিন্তু অনেক উপকারী। বাসকেরপাতা পানি দিয়ে ভালোমতো পরিষ্কার করে নিয়ে ফুটিয়ে সে পানিতে হালকা মধু মিশিয়ে খেলে কাশির জন্য অনেক উপকারে।
গরম পানি ও লবণ দিয়া গড়গড়া করা
গরম পানির সঙ্গে লবণ মিশিয়ে গড়গড়া করলে গলার ব্যথা ও কাশি কমাতে দুটোতে সাহায্য করে থাকে। দিনে দুই থেকে তিনবার করলে গলা ব্যথা থেকে আরাম পাওয়া যায়।

খুসখুসে বিরক্তিকর কাশি দূর করার উপায় 

খুশখুসে কাজগুলো দূর করতে আমরা বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকি। চলুন সেগুলো নিয়ে আজকে আলোচনা করা যাক।
  • গরম পানি ও মেন্থল মিশিয়ে ভাপ নিলে কাশি অনেকটা তরল হয়ে আসবে এবং আপনার সাথে সাথে আরাম পাবেন।
  • ছোট ছোট টুকরো করা আদা মুখের ভেতর রেখে আস্তে আস্তে চাপিয়ে রস খেলে কাশি উপশম হয়।
  • সারাদিন যেমনটা যাক রাত্রে কাশির প্রকোপটা একটু বেড়েই যাই। এমত অবস্থায় শোয়ার সময় একটু উঁচু বালিশ ব্যবহার করা কাশির জন্য একটু আরাম পাওয়া যায়।
  • চকলেট জাতীয় খাবার বা ক্যাভিনযুক্ত খাবার ভাজাপোড়া খাবার কাশির প্রকোপ বাড়িয়ে দিতে পারে তাই এই খাবারগুলো এড়িয়ে চলাই ভালো।
  • ঠান্ডা পানি খেলে বা ফ্রিজের ঠান্ডা খাবার খেলেও কাশির বেড়ে যেতে পারে তাই যতদূর সম্ভব ঠান্ডা খাবার এড়িয়ে চলা ভালো।
  • গরম খাবার খাওয়া যেমন গরম গরম সু্প জাতীয় খাবার বা মসলা চা,গরম পানি গরম দুধ ইত্যাদি খাওয়া যা কাশি উপশম করতে সাহায্য করে।

সর্দি কাশি হলে কি ওষুধ খাওয়া উচিত 

সর্দি কাশির সময় বিভিন্ন ধরনের ঘরোয়া উপাদানের সাথে সাথে কিছু ওষুধ খেতে হয় যেগুলোর মধ্যে রয়েছে:
প্যারাসিটামল
সর্দি কাশির সময় হালকা জ্বর , জ্বর জ্বর থাকলে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধগুলো খেতে পারেন। যা আপনার শরীর ব্যথা, মাথা ব্যথা ও জ্বর থাকলে কমাতে সাহায্য করবে।


নাকের ড্রপ
সর্দি কাশি হলে অনেক সময় নাক বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় আমরা নাকে ড্রপ ব্যবহার করি। ৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের নাকের ড্রপ ব্যবহার করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ব্যবহার করা উচিত। তবে টানা এক সপ্তাহ ধরে ব্যবহার করা ঠিক হবে না।
কফ সিরাপ
সর্দি কাশির জন্য বেশিরভাগ সময় কফ সিরাপ ব্যবহার করা হয়। যেমন:
  • এমবক্স
  • এ-কোল্ড তুসকা প্লাস
  • বিওকফ
  • হানিবাস
এছাড়াও ভেষজ কিছু ওষুধ মধ্যে খুবই জনপ্রিয় যেমন:
  • তুলসী
  • বাসক
  • এডভাস
  • খাইভি ইত্যাদি
তবে অবশ্যই এসব কফ সিরাপ খাওয়ার পূর্বে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে খাওয়া উচিত।
এন্টিহিস্টামিন
ঠান্ডা, হাঁচি, কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া, নাক বন্ধ থাকা এসব উপসর্গের জন্য বেশিরভাগই চিকিৎসক এন্টিহিস্টামিন খাবার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বিভিন্ন ধরনের এন্টিহিস্টামিন এর মধ্যে রয়েছে 
  • হিস্টাসিন 
  • সিটরিজিন
  • লিভোসিটরিজিন
  • ফিক্সোফেনাডিন
  • ডেজলরাটিডিন
  • লরাটিডিন
  • রুপাটিডিন
  • বিলাসটিন ইত্যাদি
এন্টিহিস্টামিন খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই বয়স অনুপাতে ডোজ নির্ধারণ করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে খাওয়া উচিত।

রাতে কাশি কমানোর উপায় 

  • রাতে ঘুমানোর আগে উষ্ণ গরম পানির সঙ্গে লবণ মিশিয়ে গার্গেল করে অনেকটা উপকার পাওয়া যায়।
  • রাত্রে বিছানায় যাবার আগেই উষ্ণ গরম পানির সঙ্গে এক চা চামচলেবুর রস ও এক চা চামচ মধু একত্রে মিশিয়ে খেতে পারেন। যা আপনার রাত্রে খুশখুসে কাশি থেকে অনেকটা আরাম দেবে।
  • গরম পানির মধ্যে পেপারমিন্টর ও ইউক্যালিপটাস তেল পানি সঙ্গে মিশিয়ে পানিতে ভাব উঠবে সে ভাবটা নিঃশ্বাসের মাধ্যমে টেনে নিলে কাশি থেকে অনেকটা আরাম পাওয়া যায় রাত্রে।
  • রাত্রে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আদার রস করে খেলেও অনেকটা মুক্তি মিলে। কারণ আদাতে রয়েছে এন্টি ইনফ্লাইমেটরি বৈশিষ্ট্য। যা কাশি কমাতে সাহায্য করবে।

অতিরিক্ত কাশি হলে কি করতে হবে

আপনি যদি অতিরিক্ত কাশি হতে থাকে তখন আপনি কি করবেন সেটাই ভেবে পান না। ঘরোয়া যে উপায়গুলো আছে সেগুলো চেষ্টা করতে পারেন। এগুলো তো কাজ না হলে আপনি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন।ঘরোয়া উপায় গুলোর মধ্যে বেশ কিছু কাজ রয়েছে যেগুলো আপনার ঘরেই থাকে সেগুলো দিয়ে খুব ভালোমতো চেষ্টা করুন। আশা করা যায় অনেকটাই আপনি আরাম পেয়ে যাবেন। সেগুলোর মধ্যে হল।
  • আদা কিংবা আদার রস করে খাওয়া।
  • লবঙ্গ দাঁতের নিচে রেখে অল্প অল্প করে রস খাওয়া তাতে খুশখুসে কাশি অনেকটা কমে যায়।
  • তুলসির পাতার রস খাওয়া যেতে পারে যা আপনার অনেক উপকারে আসবে।
  • কুসুম গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করতে পারেন তা আপনার গলাতে কোন সমস্যা থাকলেও আরাম পাবেন তার সাথে কাশি কমাতে সাহায্য করবে
  • মেন্থল জাতীয় কিছু ক্যান্ডি রয়েছে সেগুলো খেতে পারেন।
  • গরম দুধের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • গরম গরম খাবার খেতে পারেন।
  • উষ্ণ গরম পানির সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • ঠান্ডা পানি বা ফ্রিজের কোন খাবার খাবেন না সেদিকে খেয়াল রাখুন।

লেখক এর মতামত

প্রিয় পাঠক আজকে আপনাদের সঙ্গে শুকনো কাশি থেকে মুক্তি পাওয়ার বিভিন্ন ধরনের উপায় আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করার চেষ্টা করেছি। যদি আমার এই পোস্টটি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই পোস্টটি শেয়ার করে দেওয়ার অনুরোধ রইল।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

টুকিটাকিরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url