গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার তালিকা-গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না
গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার তালিকা আপনাদের মধ্যে অনেকে জানতে চান আজকে তাদের জন্যই আমার এই পোস্টটি। গর্ভবতী মায়েরা আরো জানতে চান গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না চলুন তাহলে আজকে সেগুলো জেনে নিই।
গর্ভাবস্থায় কি কি মাছ খাওয়া যাবে না,গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া উচিত না ও গর্ভাবস্থায় কি কি শাক খাওয়া যাবে না চলুন আজকে তাহলে সেগুলো জেনে নেওয়া যাক।
ভূমিকা
গর্ভাবস্থায় প্রতিটা মা অনেক চিন্তিত থাকেন কিভাবে চলবেন কি করবেন? কি খাবেন? বা কি কি খাওয়া যাবেনা? কি কি কাজ করা যাবে না? কিংবা কোন কোন কাজ করলে শরীরের জন্য ক্ষতিকর? কোন কোন খাবার খেলে বাবুর জন্য ক্ষতিকর? সকল কিছু চিন্তা করে। গর্ব অবস্থায় শরীরকে ভালো রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের ফল শাকসবজি ডিম দুধ ইত্যাদি খাওয়া উচিত।
আরো পড়ুন : গর্ভাবস্থায় কাঁচা পেঁপে খেলে কি হয়
যা বাচ্চা বেড়ে ওঠার জন্য এবং মায়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য খুবই জরুরী। কিছু কিছু সবজি রয়েছে যেগুলো খেলে আয়রনের ঘাটতি পূরণ হয়। আবার কিছু কিছু ফল রয়েছে যেগুলো খেলে ভিটামিন ও ক্যালসিয়াম পেয়ে থাকে। যদি প্রতিটা জিনিস জেনে বুঝে খাওয়া যায় তাহলে মা ও বাবুর জন্য অনেক উপকারী।
গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবার তালিকা
গর্ভবতী মা এবং অনাগত শিশু বিকাশে কিছু কিছু খাবার ঝুঁকির কারণ হতে পারে। আজ আমরা চেষ্টা করব গর্ভবতী মায়ের নিষিদ্ধ খাবারের তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার।
- উচ্চ পারদ রয়েছে এমন মাছ: উচ্চ মাত্রার পারদযুক্ত মাছ যেমন হাঙ্গর, সোর্ডফিশ, কিং ম্যাকেরেল এবং টাইলফিশ এড়িয়ে চলুন। কারণ পারদ ভ্রূণের বিকাশমান স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে।
- কাঁচা বা কম রান্না করা এমন সামুদ্রিক খাবার: সুশি, ঝিনুক সহ কাঁচা বা কম রান্না করা সামুদ্রিক খাবার লিস্টিরিওসিস বা টক্সোপ্লাজমোসিসের মতো খাবার অসুস্থতার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
- কাঁচা বা কম সিদ্ধ ডিম: কাঁচা বা কম সিদ্ধ ডিমে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। যা খাদ্যে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। ঘরে তৈরি মেয়োনিজ, হোল্যান্ডাইজ সস এবং কাঁচা ডিমের তৈরি এমন কিছু মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।
- পাস্তুরিত দুগ্ধজাত দ্রব্য: পাস্তুরিত দুধ এবং দুগ্ধজাত দ্রব্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া যেমন লিস্টিরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। যা গর্ভপাত, মৃতপ্রসব বা গুরুতর অসুস্থতার কারণ হতে পারে।
- প্রক্রিয়াজাত মাংস: মাংস এবং প্রক্রিয়াজাত মাংস যেমন হট ডগ এবং সসেজে লিস্টিরিয়া ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। খাবার পূর্বে ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলার জন্য এগুলিকে গরম করা উচিত।
- কাঁচা বা অঙ্কুরিত ডাল বীজ: আলফালফা, ক্লোভার, মূলা এবং মুগ ডালের স্প্রাউট সহ কাঁচা স্প্রাউটগুলি সালমোনেলা, ই. কোলি এবং লিস্টেরিয়ার মতো ব্যাকটেরিয়াকে থাকতে থাকতে পারে। যা খাদ্যজনিত অসুস্থতার কারণ হতে পারে।
- অপরিষ্কার ফল ও সবজি: কোনো ময়লা, ব্যাকটেরিয়া বা কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ অপসারণের জন্য খাওয়ার আগে সব ফল ও সবজি ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
- মাত্রা অতিরিক্ত ক্যাফেইনযুক্ত খাবার: গর্ভাবস্থায় ক্যাফেইন গ্রহণ সীমিত করুন। উচ্চ মাত্রার ক্যাফিন গর্ভপাত এবং কম ওজনের বাচ্চা জন্মের ঝুঁকির তৈরি করে। প্রতিদিন ২০০-৩০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ করবেন না।
- অ্যালকোহল: গর্ভাবস্থায় অ্যালকোহল সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলুন। এটি শিশুর জন্মগত ত্রুটি, বিকাশে বিলম্ব এবং আজীবন অক্ষমতার কারণ হতে পারে।
- উচ্চ-চিনি ও উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার: অতিরিক্ত শর্করা এবং চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ সীমিত করুন, যেমন চিনিযুক্ত স্ন্যাকস, কেক, পেস্ট্রি এবং ভাজা খাবার, কারণ এগুলো অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি এবং গর্ভকালীন রক্তের শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে।
- ভেষজ চা ও সম্পূরক: গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন ভেষজ ঔষধ স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তাই ভেষজ চা ও সম্পূরক গ্রহণের পূর্বে একজন ভেষজ চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
- কলিজা: প্রাণীর কলিজায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে। গর্ভাবস্থায় মাত্রা অতিরিক্ত ভিটামিন এ স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে।
- প্যাকেটজত ফলের রস: কিছু প্যাকের জাত ফলের রসে কৃত্রিম রং ও প্রিজারভেটিভ ব্যবহার করে থাকে। যার ফলে গর্ভপাত ও শিশু বিকাশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
- অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার: অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার গ্যাস, পেট ব্যথা, পেট ফাঁপা, বমি সহ বিভিন্ন উপসর্গ তৈরি করে। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার উপসর্গগুলোকে আরো অস্থিতিকর করে তোলে।
- নাইট্রেট রয়েছে এমন জাতীয় খাদ্য: নাইট্রেট রক্তের হিমোগ্লোবিনের সাথে বিরুপপ্রতিক্রিয়া তৈরি করে। এটি রক্তের অক্সিজেন মাত্রা কমিয়ে দেয়। বিভিন্ন জাতীয় শোডা ও ড্রিঙ্কস এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে নাইট্রেট থাকে তাই গর্ভাবস্থায় অবস্থায় এ সমস্ত খাবার এগিয়ে চলা উচিত।
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য একটি সুষম এবং পুষ্টিকর খাদ্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। তাই গর্ভবতী মহিলাদের সুষম এবং পুষ্টিকর খাদ্য তালিকা তৈরির জন্য একজন চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন।
আরো পড়ুন :গর্ভের বাচ্চার ওজন বৃদ্ধির খাবার
গর্ভাবস্থায় কি কি মাছ খাওয়া যাবে না
গর্ভাবস্থায় কি কি মাছ খাওয়া যাবে না তার একটি তালিকা নিচে দেওয়া হল:
- হাঙর
- সোর্ডফিশ
- কিং ম্যাকেরেল
- টাইলফিশ
- মার্লিন
- অরেঞ্জের রাওরি
- বিগিয়ে টুনা
- জাপানে সুশী নামক সামুদ্রিক মাছ
- সিভিচ
- ইমপোর্ট করা মাগুর মাছ
গর্ভাবস্থায় কি কি ফল খাওয়া উচিত না
গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না
- করলা
- মাশরুম
- পালং শাক
- পেঁপে
- সজিনা
- অ্যালোভেরা
- ক্রুসিফেরাস সবজি: ব্রোকলি, বাঁধাকপি, ফুলকপি
- উচ্চ ভিটামিন এ যুক্ত সবজি: মিষ্টি আলু, গাজর
- কীটনাশক বা রাসায়নিক দ্বারা দূষিত সবজি
- এলার্জি যুক্ত সবজি: কচু
গর্ভাবস্থায় কি কি শাক খাওয়া যাবে না
সিটেস্টেরল উপাদান রয়েছে এমন ধরনের শাক: সজিনা ও সজিনা পাতার শাকে অনেক পুষ্টি ও স্বাস্থ্যকর খাবার। কিন্তু এতে আলফা সিটেস্টেরল উপাদান থাকে। যা গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। তাই খাবার পূর্বে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
এলার্জি হতে পারে এমন ধরনের শাক : পুঁইশাক ও কচুশাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-সি এবং ক্যালসিয়াম ও আয়রন পাওয়া যায়। যদিও এটি রক্তস্বল্পতার প্রতিরোধে সাহায্য করে। কিন্তু কিছু ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এটি এলার্জি ও এসিডিটির সমস্যা তৈরি করে। তাই গর্ভাবস্থায় পুঁইশাক ও কচু শাক খাওয়ার পূর্বে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
আরো পড়ুন :গর্ভাবস্থায় কচু শাক খাওয়ার উপকারিতা
ক্রুসিফেরাস রয়েছে এমন ধরনের শাক: ব্রোকলি, বাঁধাকপি, ফুলকপি এগুলোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন,আইরন, ম্যাগনেসিয়াম,ক্যালসিয়াম, ফোলাইট যা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। কিন্তু এতে থাকা ক্রুসিফেরাস উপাদান অনেক সময় গর্ভবতী মায়েদের গর্ভপাত ঘটার কারণ হতে পারে। খাবার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
হেলেঞ্চা জাতীয় শাক : কলমি, হিঞ্চে হেলেঞ্চা জাতীয় শাক এতে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম পটাশিয়াম এবং সামান্য পরিমাণে প্রোটিন থাকে। রয়েছে আয়রন ও ফলিক অ্যাসিড। রক্তস্বল্পতার রোগীদের জন্য এতে অনেক উপকারে হলেও যারা গর্ভবতী ও কিডনি রোগীদের জন্য এটি খাওয়া একদমই যাবে না।
আরো পড়ুন : গর্ভাবস্থায় পান্তা ভাত খেলে কি হয়
FAQS
মাসিক বন্ধ হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায়?
শেষ মাসিকের তারিখ থেকে ৩৫ থেকে ৪০তম দিনে প্রেগন্যান্ট বোঝা যায়। পূর্বে যদি আপনার মাসিক নিয়মিত হয়ে থাকে তবে মাসিক বন্ধ হওয়ার ৭ থেকে ১০ দিনের মাথায় প্রেগন্যান্ট হয়েছেন কিনা বুঝতে পারবেন।
বাচ্চা পেটে থাকা অবস্থায় কি কি খেতে হয়?
বাচ্চা পেটে থাকা অবস্থায় মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, বিভিন্ন ধরনের ডাল, বিভিন্ন ধরনের ফল, সবুজ শাকসবজি,ক্যালসিয়াম, আইরন,জিংক, ফলিক এসিড হয়েছে এমন ধরনের খাবার খেতে হবে।
কত মাসের গর্ভের বাচ্চার নড়াচড়া করে?
সাধারণত গর্ভের বাচ্চার নড়াচড়া ১৬ থেকে ২৪ সপ্তাহের মধ্যেই বোঝা যায়। অনেক গর্ভবতী মা ১৮ থেকে ২০ সপ্তাহের মধ্যেই বাচ্চার নড়াচড়া বুঝতে পারেন। কিছু মিলিয়ে আমরা বলতে পারি ৪ মাস পরে গর্ভের বাচ্চা নড়াচড়া সঠিকভাবে বোঝা যায়।
প্রথম ত্রৈমাসিকে গর্ভবতী মহিলাদের কোন ফলের জুস খাওয়া উচিত?
সাধারণত প্রথম ত্রৈমাসিকে গর্ভবতী মহিলাদের ফাইবার, পটাশিয়াম, ভিটামিন সি রয়েছে এমন ধরনের পরের জুস খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে কলা হতে পারে একটি আদর্শ ফল যা আপনি জুস করে খেতে পারেন। কলা ছাড়াও আপনি কমলা বা মাল্টা আপনার পছন্দমত উপায়ে খেতে পারেন।
লেখক এর মতামত
প্রিয় পাঠক,আজকে আপনাদেরকে গর্ব অবস্থায় গর্ভবতী মায়ের কি কি খাওয়া যাবে। কি কি খাওয়া যাবেনা বা নিষিদ্ধ খাবার তালিকা গুলো সবগুলোই দেওয়ার চেষ্টা করেছি যদি আপনাদের পোস্টটি পড়ে ভালো লেগে থাকে কিংবা উপকারে এসে থাকে। তাহলে পোস্টটি শেয়ার করে দেওয়ার অনুরোধ রইল। যেন আপনার প্রিয় বন্ধু বা আপনার আপনজন সকলেই জানতে পারে এ সকল বিষয়গুলো নিয়ে।
টুকিটাকিরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url