হিট স্ট্রোক-হিট স্ট্রোক এর ১৪টি লক্ষণ

হিট স্ট্রোক-হিট স্ট্রোক এর ১৪টি লক্ষণ সমূহ আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব। এখনকার সময়ে হিট স্ট্রক খুব কমন একটি সমস্যা । এই সমস্যাই যেকোনো সময় একটি মানুষ সম্মুখীন হতে পারে। সেজন্য হিট স্ট্রোক সম্বন্ধে কিছুটা ধারণা রাখা আমাদের সকলেরই প্রয়োজন। হিট স্ট্রোক এর প্রাথমিক চিকিৎসা সম্বন্ধে আপনাদের কিছুটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। যা আপনাদের জন্য অনেক সহায়ক হবে। চলুন তাহলে পড়া শুরু করা যাক।
হিট স্ট্রোক-হিট স্ট্রোক এর ১৪টি লক্ষণ
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয় গুলো কি কি এ সকল বিষয়গুলো আজকে আপনাদের জানাতে চলেছি। চলুন তাহলে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

ভূমিকা

চলতি সময় গুলোতে হিট স্ট্রোকের মতো সমস্যা খুব বেশি হচ্ছে। এই সমস্যাগুলো থেকে নিজেকে ছেপে রাখার জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে পারি যেমন ছায়াযুক্ত স্থানে থাকা, প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা, রৌদ্রে বেশি বের না হওয়া, যে কাজগুলো আমরা দুপুরে করতাম সে কাজগুলো সকালের দিকে শেষ করে ফেলা। দিনের বেলা শরীরচর্চা বাদ দেওয়া ইত্যাদি কাজগুলো দূরে থাকার চেষ্টা করব।

হিট স্ট্রোক

মানব শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা 98.6 ডিগ্রী ফারেনহাইট। সাধারণত এ তাপমাত্রা বজায় থাকলে শরীর সুস্থ স্বাভাবিক থাকে। যখন আমাদের শরীর তীব্র তাপ এক্সপোজ করতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম বা ব্যর্থ হয় তখনই হিট স্ট্রোক ঘটে। ডিহাইড্রেশন, গরম ও আর্দ্র অবস্থা, নির্দিষ্ট রোগে আক্রান্ত, ওষুধ, বয়স এবং কঠোর শারীরিক পরিশ্রম সবই হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

হিট স্ট্রোক এর কারণ 

  • আর্দ্র পরিবেশ: হিট স্ট্রোকের প্রাথমিক কারণগুলির মধ্যে একটি হল আর্দ্র পরিবেশে। এটি শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি ঘটাতে পারে, যা ব্যক্তিকে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকিতে ফেলে।
  • উচ্চ তাপমাত্রা: অত্যধিক গরম আবহাওয়া বিশেষ করে তাপোদাহের সময়, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাকে কমিয়ে দিতে পারে ফলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
  • ডিহাইড্রেশন: পানি স্বল্পতা বা ডিহাইড্রেশন ত্বকে রক্ত ​​​​প্রবাহ হ্রাস করে। যা শরীরের তাপ বের করে দেওয়ার ক্ষমতাকে ব্যাহত করে এবং শরীরের মূল তাপমাত্রা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
  • তীব্র শারীরিক পরিশ্রম: তীব্র শারীরিক পরিশ্রম বিশেষ করে গরম এবং আর্দ্র অবস্থায় শরীরে অতিরিক্ত গরম লাগতে পারে যা হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
  • অতিরিক্ত বা মোটা পোশাক পরিধান: অতিরিক্ত গরম লাগার আরো একটি কারণ অধিক কাপড় পরিধান করা বা মোটা পোশাক পরিধান করা। তীব্র গরমের সময় এমন ধরনের পোশাক হিট স্ট্রোক তৈরি করতে পারে।
  • অ্যালকোহল: অ্যালকোহল শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা নষ্ট করে। যা হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
  • দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা: দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা যেমন হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, এবং স্থূলতা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাকে ব্যাহত করতে পারে। এ সকল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি।
  • নির্দিষ্ট ঔষধ: কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ যেমন মূত্রবর্ধক, অ্যান্টিহিস্টামাইনস এবং বিটা-ব্লকার, শরীরের নিজেকে ঠান্ডা করার ক্ষমতাকে কমিয়ে দিতে পারে। ফলে হিট স্ট্রোকের মত অসুস্থতার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
  • বয়স: ছোট শিশু এবং বয়স্কদের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা কম থাকে ফলে তাপদাহ বা তাপমাত্রা বেশি হলে হিট স্ট্রোকের উচ্চ ঝুঁকি দেখা দিতে পারে।

হিট স্ট্রোক এর লক্ষণ

  • বমি-বমিবমি-বমি ভাব।
  • বমি হওয়া।
  • দ্রুত ও ছোট ছোট শ্বাসপ্রশ্বাস।
  • হৃদস্পন্দন দ্রুত হওয়া।
  • মাংস পেশি কামড়ানো, চাবানো, দুর্বলতা।
  • শরীরের তাপমাত্রা ত্যধিক বেড়ে যাওয়া।
  • প্রস্রাব কমে যাওয়া।
  • প্রস্রাবে জ্বালা পােড়া করা।
  • অতিরিক্ত ঘামতে থাকা এবং এক পর্যায়ে ঘাম কমে যাওয়া।
  • ত্বক গরম ও লালচে হয়ে যাওয়া।
  • প্রচন্ড মাথাব্যথা।
  • আচরণগত অস্বাভাবিক পরিবর্তন যেমন বিভ্রান্তি, স্তম্ভিত।
  • খিঁচুনি হাওয়া।
  • অজ্ঞান হয়ে পড়া।
  • শরীরের তাপ ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হওয়া।

হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয়

১.হালকা রঙের, ঢিলেঢালা পোশাক ও চওড়া টুপি পরুন।
২.ত্বককে সুস্থ রাখতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
৩.ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করতে, ফলের রস, অতিরিক্ত তরল খাবার গ্রহণ করুন।
৪.সাধারণত প্রতিদিন অন্তত আট গ্লাস পানি করুন।
৫.প্রচন্ড তাপে শরীরে ইলেকট্রোলাইটে তারতম্য হতে পারে তাই ইলেক্ট্রোলাইট-সমৃদ্ধ ড্রিংক পান করুন পান করুন।
৬.ব্যায়াম বা ভারী কাজের সময় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করুন। প্রয়োজনে কাজের ২ ঘন্টা পূর্বে পানি পান করুন।
৭.হেড স্ট্রোক প্রতিরোধে সকালে বা সন্ধ্যার পর কাজ নির্ধারণ করুন
৮. পানিশূন্যতার লক্ষণ বোঝার জন্য আপনার প্রস্রাবের রঙ লক্ষ্য রাখুন। গাঢ় প্রস্রাব পানিশূন্যতার লক্ষণ।
৯. ক্যাফেইন বা অ্যালকোহলযুক্ত তরল এড়িয়ে চলুন।
১০. দিনের উষ্ণতা প্রতিরোধে বাড়িতে ক্রস ভেন্টিলেশন, পর্দা বা ছায়ার ব্যবস্থা করুন।

হিট স্ট্রোক এর প্রাথমিক চিকিৎসা

  • রােগীকে দ্রুত ঠান্ডা স্থানে নিয়ে বাতাস করুন অথবা ফ্যানের নিচে রাখুন ।
  • ঠান্ডা পানি ছিটিয়ে দিন।
  • সোজা করে শুয়ে দিন এবং পা দুটো একটু উঁচুতে ধরে রাখুন।
  • কাপড়ে বরফ মুড়ে শরীর মুছে দিন।
  • ভেজা কাপড় দিয়ে ঘাড়, বগল ও কুচকি মুছে দিন।
  • ঠান্ডা পানি ও শরবত পান করতে দিন।
  • রােগী জ্ঞান হারিয়ে ফেললে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিন।

হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচার উপায়

এই গরমে কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চললেই হিট স্ট্রোকের মতো সমস্যা থেকে নিজেকে অনেকটাই রক্ষা করা যায় সেগুলো হল:
  • যদি আমরা পোশাকের দিকে নজর দেই তাহলে হালকা রঙের, পাতলা সুতি কাপড় ও ঢেলাঢালা পোশাক পরিধান করা।
  • যতদূর সম্ভব ঘরে থাকা বা ছায়াযুক্ত স্থানে অবস্থান করা।
  • যদি কোন কারণে বাহিরে যেতে হয় তাহলে অবশ্যই ছাতা কিংবা টুপি ব্যবহার করা।
  • প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা। বাহিরের কেনা জুস না খেয়ে বাড়িতে তৈরি কলেজ জুস স্যালাইন ডাবের পানি ইত্যাদি বেশি পরিমাণে খাওয়া।
  • অ্যালকোহল জাতীয় পানি পান না করা।
  • চর্বি জাতীয় খাবার, বাহিরের ভাজাপোড়া খাবার প্রচুর পরিমাণে ঝাল খাবার এড়িয়ে চলা।
  • বিনা প্রয়োজনে রৌদ্রে ঘোরাঘুরি না করা।

লেখক এর মতামত

প্রিয় পাঠক আজকে আপনাদের হিট স্টোক সম্বন্ধে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে কিংবা উপকারে এসে থাকে। তাহলে অবশ্যই পোস্ট টি শেয়ার করে দেওয়ার অনুরোধ রইলো। কারণ আপনি শেয়ার করলে আপনার প্রিয়জন বা বন্ধুগণ সকলেই এই বিষয়গুলো নিয়ে অবগত হবেন এবং আশা করি তাদের উপকারে আসবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

টুকিটাকিরনীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url